পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 . . . রবীন্দ্র-রচনাবলী কারণে—ল, তাহার এত সামান্ত আয় যে তাহাতে কেবল তাহার নিজের পেটটাই ভরে, তাও ভরে না বুঝি ! তাহার কিছুই বাকী থাকে না—যতই কিছু আসে তাহার নিজের অতি মহৎ শূন্ততা পূরাইতে, অতি বৃহৎ দুর্ভিক্ষ-দারিদ্র্য দূর করিতেই খরচ হইয়া যায় । সুতরাং যখন সে বিদায় হয়, তখন তাহার সেই প্রকাগু শূন্ততা ও হৃদয়ের দুর্ভিক্ষই তাহার সঙ্গে সঙ্গে যায়, আর কিছুই যায় না। লোকে বলে, ঢের টাকা রাখিয়া মরিল ! ঠিক কথা, কিন্তু এক পয়সাও লইয়া মরিল না । নিস্ফল আত্মা । সুতরাং, আত্মকে যে দিতে পারিয়াছে আত্মা সৰ্ব্বতোভাবে তাহারই । আত্মা ক্রমশই অভিব্যক্ত হইয়া উঠিতেছে। জড় হইতে মকুন্ত-আত্মার অভিব্যক্তি ; মধ্যে কত কোটি কোটি বৎসরের ব্যবধান । তেমনি স্বার্থ-সাধন-তৎপর আদিম মনুষ্য ও আত্মবিসর্জন-রত মহাশয়ের মধ্যে কত যুগের ব্যবধান। একজন নিজের আত্মাকে ভালরূপ পায় নাই, আর একজনের আত্মা তাহার হাতে আসিয়াছে। আত্মার উপরে যাহার অধিকার জন্মে নাই, সে যে আত্মাকে রক্ষা করিতে পারিবে তাহা কেমন করিয়া বলিব ? সকল মনুষ্য নহে—মনুষ্যদের মধ্যে র্যাহারা সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ, যথার্থ হিসাবে তাহাদেরই আত্মা আছে। যেমন গুটিকতক ফল ফলাইবার জন্য শতসহস্ৰ নিফল মুকুলের আবশ্বক, তেমনি গুটিকতক অমর আত্মা অভিব্যক্ত হয়, এবং লক্ষ লক্ষ মানবাত্মা নিস্ফল হয়। আত্মার অমরত । আত্মবিসর্জনের মধ্যেই আত্মার অমরতার লক্ষণ দেখা যায়। যে আত্মায় তাহা দেখা যায় না, সে আত্মার যতই বর্ণ থাকুক ও যতই গন্ধ থাকুক তাহ বন্ধ্যা । একজন মাচুল কেনই বা আত্মবিসর্জন করিবে ! পরের জন্য নিজেকে কেনই বা কষ্ট দিবে ! ইহার কি যুক্তি আছে। যাহার সহিত নিতান্তই আমার মুখের যোগ, তাহাই আমার অবলম্ব্য আর কিছুর জন্যই আমার মাথাব্যথা নাই, এই ত ইহ-সংসারের শাস্ত্র। জগতের প্রত্যেক পরমাণুই আর সমস্ত উপেক্ষা করিয়া নিজে টিকিয়া থাকিবার জন্য প্রাণপণে যুঝিতেছে, স্বতরাং স্বার্থপরতার একটা যুক্তি-সঙ্গত অর্থ দেখা যাইতেছে। কিন্তু এই স্বার্থপরতার উপরে মরণের অভিশাপ দেখা যায়, কারণ ইহা সীমাবদ্ধ । ঐহিকের নিয়ম ঐহিকেই অবসান, সে নিয়ম কেবল এইখানেই খাটে। সে নিয়মে যাহারা চলে