পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমালোচনা pl 이 হয়। ফুল মতলব করিয়া সুন্দর হইয়াছে, পার্থী মতলব করিয়া সুন্দর গাহিতেছে,— সৰ্ব্বদা পাহারা দিতে থাক, পাছে মতলব ধরা না পড়ে—পাছে যাহার মতলব আছে তাহাকে সরল মনে করিয়া তুমি ঠকিয়া যাও, তুমি নিৰ্ব্বোধ বনিয়া যাও। আমার বুদ্ধিমান হইয়া কাজ নাই, আমি চিরকাল ঠকিব, আমি চিরকাল নিৰ্ব্বোধ হইয়া থাকিব ! আমি সুন্দরকে উপভোগ করিতে চাই, আমি সৌন্দৰ্য্যকে বিশ্বাস করিতে চাই । আমি ঠকিতে চাই, কারণ এ স্থলে ঠকিলেও লাভ । আর, সব চেয়ে লোকসান হয় তোমারই! তোমার ঐ বুদ্ধির টেরা চোখ দুটার উপর অন্ধবিশ্বাস স্থাপন করিয়া প্রকৃতিকে বাকা দেখিতেছ—সে কি তোমার বড় স্বথের কারণ হইয়াছে ? তাহার চেয়ে কি তোমার ঐ চোখ দুটা অন্ধ হইলেই ভাল ছিল না ? তোমাদের স্বখ ত ভারি দেখিতেছি ! তোমরা প্রাণ খুলিয়া হাসিতে পার না, প্রাণ খুলিয়া প্রশংসা করিতে পার না, প্রাণ খুলিয়া পরকে বিশ্বাস করিতে পার না । “যদি” “কিন্তু” “কদাচ” “কিঞ্চিং” প্রভৃতি কথাগুলা ব্যবহার করিয়া কৃপণের দড়ি-বাধা টাকার থলির মুখের মত তোমাদের ভাষাকে কুঞ্চিত সঙ্কুচিত করিয়া তুলিয়াছ । ইহাকেই তোমরা বিজ্ঞতার লক্ষণ মনে কর। ভাল লোককে “হম্বগ” মনে করা, ভদ্রতাকে হীনতা মনে করা, যে তোমাদের নিজের মতাবলম্বী নয় তাহাকে অশিক্ষিত অপদার্থ মনে করা, যশস্বী লোকের যশকে ফাকি মনে করা, তোমাদের অপেক্ষ শত গুণে বিদ্বান লোকের বিদ্যার গভীরতা নাই বলিয়া লোকের কাছে প্রচার করা, কিঞ্চিৎ হাতে রাখিয়া মত ব্যক্ত করা, নিজেকে ভারি এক জন মস্ত লোক মনে করা, এই সকলকে তোমরা বিজ্ঞতার লক্ষণ বলিয়া জান । তোমরা সিংহাসনস্থ বড় বড় রাজা মহারাজার চেয়ে নিজেকে উচু মনে করিতেছ—তাহার কারণ, তোমাদের আত্মম্ভরিতা নামক লাঙ্গুলের প্রসরটা অত্যন্ত অধিক—নিজ-রচিত কুণ্ডালত লাস্কুল-সিংহাসনের উপর বসিয়া দূরবীক্ষণের উন্ট দিক দিয়া জগৎসংসারকে দেখিতেছ। তোমাদের শরীরের আয়তন অধিক নহে, কিন্তু লেজ হইতে মাপিলে অনেকটা হয়। বিজ্ঞতার হৃদয় যদি এতটা প্রশস্ত হয় যে পরকে আলিঙ্গন করিয়া ধরিলে তাহার বক্ষে স্থান কুলায়, কুঞ্চিৎ-চৰ্ম্ম সংশয়ের নাম যদি বিজ্ঞতা না হয়, তবে সেই বিজ্ঞতা উপার্জনের জন্য চেষ্টা করিব । তোমাদের বিজ্ঞতায় যে সুৰ্য্যের আলো নাই, বসন্ত-কাননের খামল বর্ণ নাই। তোমাদের বিজ্ঞতা সমুদয় জগৎকে অবিশ্বাস করিয়া অবশেষে একটি দুই হাত পরিমাণ ডোবার মধ্যে নিজেকে বদ্ধ করিয়াছে ও আপনাকে সমুদ্রের চেয়ে গভীর মনে করিতেছে, চন্দ্র স্বৰ্য্যের হাসিকে চপলতা জ্ঞান করিতেছে, অনবরত পচিয়া উঠিতেছে, ও মুখটা আঁধার করিয়া মুগম্ভীর চেহারা