পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আলোচনা ৷ "HA লুটাইয়া পড়িতেছে, ইহারা আমার হৃদয়ের এই অতি তীব্র শোক অহরহ শাস্ত করিতেছে। জগতের চতুর্দিক হইতে আমার উপর অবিশ্রাম সান্থনা বর্ষিত হইতেছে অথচ আমি জানিতে পারিতেছি না, অথচ কেহই একটি সান্থনার বাক্য বলিতেছে না— কেবল অলক্ষ্যে অদৃশ্বে আমার আহত হৃদয়ের উপরে তাহাদের মন্ত্রপূত হাত বুলাইয়া যাইতেছে, আহাউহুটুকুও বলিতেছে না। আমাদের চতুৰ্দ্দিকবর্তী এই যে কাৰ্য্যকুশল সদাব্যস্ত ব্যক্তিগণ গুপ্তভাবে থাকে সে কেবল আমাদিগকে ভুলাইবার জন্য . আমাদিগকে জানাইবার জন্য যে আমরাই স্বাধীন। h ২য়। অর্থাৎ, অধীনতা খুব প্রকাগু হইলে তাহাকে কতকটা স্বাধীনতা বল। ৰাইতে পারে—কারাগার যদি মস্ত হয়, তবে তাহাকে কারাগার না বলিলেও চলে । বোধ করি, আমাদিগকে স্থায়ীরূপে অধীন রাখিবার জন্য এই উপায় অবলম্বন করা হইয়াছে। পাছে মূহুমুহু আমাদের চেতন হয় যে আমরা অধীন, ও বৈরাগ্য সাধন দ্বারা প্রকৃতির শাসন লঙ্ঘন করিয়া স্বাধীন হইতে চেষ্টা করি, এই ভয়ে প্রকৃতি আমাদের হাত হইতে হাতকড়ি খুলিয়া লইয়া আমাদিগকে একটা বেড়া-দেওয়া জায়গায় রাখিয়া দিয়াছে। আমরা ভুলিয়া থাকি আমরা অধীনতার দ্বারা বেষ্টিত, মনে করি আমরা ছাড়া পাইয়াছি । ১ম । কিম্বা এমনও হইতে পারে প্রকৃতি আমাদিগকে স্বাধীনতার শিক্ষা দিতেছেন। দেখ না কেন, উত্তরোত্তর কেমন স্বাধীনতারই বিকাশ হইতেছে ! জড় যে, সে নিজের জন্য কিছুই করিতে পারে না। উদ্ভিদ তাহার চেয়ে কতকটা উচ্চ । কারণ টিকিয়া থাকিবার জন্য থানিকট যেন তাহার নিজের উদ্যমের আবশ্ব্যক, তাহাকে রস আকর্ষণ করিতে হয়, বাতাস হইতে আহাৰ্য্য সংগ্ৰহ করিতে হয় ! মানুষ এত বেশী স্বাধীন যে, প্রকৃতি বিস্তর প্রধান প্রধান কাজ বিশ্বাস করিয়া আমাদের নিজের হাতেই রাথিয়া দিয়াছেন। আর, স্বাধীনতা জিনিষ বড় সামান্য নহে। জড়ের কোন বালাই নাই। আমরা, মানুষেরা, কি করিলে যে ভাল হইবে, পদে পদে তাহা ভাবিয়া পাই না। আকুল হইয়া একবার এটা দেখিতেছি, একবার ওটা দেখিতেছি ; এবং এইরূপ পরীক্ষা করিতে করিতেই আমরা শত সহস্ৰ করিয়া মারা পড়িতেছি । উত্তরোত্তর যেরূপ স্বাধীনতার বিকাশ হইয়া আসিয়াছে, ইহারই যদি ক্রমিক চালনা হয়, তাহা হইলে মানুষের পর এমন জীব জন্মাইবে, যাহার ক্ষুধা পাইবে না অথচ বিবেচনাপূর্বক আহার করিতে হইবে ( অনেক মানুষেরই তাহ করিতে হয় ), রক্তসঞ্চালন ও পরিপাককাৰ্য্য তাহার নিজের কৌশলে করিয়া লইতে হইবে, ( মানুষের রন্ধন-কাৰ্য্যও কতকটা তাহাই ) ভাবিয়া চিন্তিয় তাহার