পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
৩৩

সেই ঔদ্ধত্যে মানুষের রচনা কুশ্রী হয়ে উঠ্‌তে লজ্জমাত্র করে না। কলের জাহাজে পালের জাহাজের চেয়ে সুবিধা আছে, কিন্তু সৌন্দর্য্য নেই। জাহাজ যখন আস্তে আস্তে বন্দরের গা ঘেঁষে এল, যখন প্রকৃতির চেয়ে মানুষের দুশ্চেষ্টা বড় হয়ে দেখা দিল, কলের চিম্‌নিগুলো প্রকৃতির বাঁকা ভঙ্গিমার উপর তার সোজা আঁচড় কাটতে লাগ্‌ল, তখন দেখ্‌তে পেলুম মানুষের রিপু জগতে কি কুশ্রীতাই সৃষ্টি করচে। সমুদ্রের তীরে তীরে, বন্দরে বন্দরে, মানুষের লোভ কদর্য্য ভঙ্গীতে স্বর্গকে ব্যঙ্গ করচে —এম্‌নি করেই নিজেকে স্বর্গ থেকে নির্ব্বাসিত করে দিচ্চে।

 তোসা মারু, পিনাং বন্দর।

 ২রা জ্যৈষ্ঠ। উপরে আকাশ, নীচে সমুদ্র। দিনে রাত্রে আমাদের দুই চক্ষুর বরাদ্দ এর বেশি নয়। আমাদের চোখ দুটো মা-পৃথিবীর আদর পেয়ে পেটুক হয়ে গেছে। তার পাতে নানা রকমের জোগান দেওয়া চাই। তার অধিকাংশই সে স্পর্শও করে না, ফেলা যায়। কত যে নষ্ট হচ্চে বলা যায় না, দেখবার জিনিষ অতিরিক্ত পরিমাণে পাই বলেই দেখবার জিনিষ সম্পূর্ণ করে’ দেখি নে। এই জন্যে মাঝে মাঝে আমাদের পেটুক চোখের পক্ষে এই রকমের উপবাস ভালো।