পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বর্গীয় প্রহসন
৬৩

করিবার কোনো উপায় নাই; অতএব সংখ্যা বৃদ্ধি করিবার পূর্ব্বে সবিশেষ বিবেচনা করিয়া দেখা কর্ত্তব্য।

 ইন্দ্র। হে সুরগুরো, স্বর্গের পথ দুর্গম করিবার জন্য স্বর্গাধিপতির চেষ্টার ত্রুটি নাই এ কথা সর্ব্বজনবিদিত।

 বৃহস্পতি। পাকশাসন নাকপতে, তবে কেন অধুনা দেবলােকে মনসা শীতলা ঘেঁটু নামধারী অজ্ঞাতকুলশীল নব নব দেবতার অভিষেক হইতেছে?

 ইন্দ্র। দ্বিজোত্তম, আমরা দেবতাগণ ত্রিভুবনের কর্ত্তৃত্বভার প্রাপ্ত হইয়াছি বটে কিন্তু সে কেবল ত্রিভুবনের সম্মতিক্রমে। এ কথা গুরুদেবের অগােচর নাই, যে, মর্ত্ত্যলােকেই দেবতাদের নির্ব্বাচন হইয়া থাকে। এককালে আর্য্যাবর্তের সমস্ত ব্রাহ্মণ হােতাগণ আমাকেই স্বর্গের প্রধান পদ দিয়াছিলেন এবং তৎকালে সরস্বতী দৃষদ্বতী তীরের প্রত্যেক যজ্ঞ হুতাশনে আমার উদ্দেশে অহরহ যে হবি সমর্পিত হইত তাহার হােমধূমে আমার সহস্রলােচন হইতে নিরন্তর অশ্রু প্রবাহিত হইত। অদ্য নরলােকে হবি ঘৃত কেবল মাত্র জঠরযজ্ঞে ক্ষুধাসুরের উদ্দেশেই উপহৃত হইয়া থাকে এবং শুনিতে পাই সে ঘৃতও বিশুদ্ধ নহে।

 বৃহস্পতি। বৃত্রনিসূদন, সেই অপবিত্র বিমিশ্র ঘৃতপানে, শুনিতে পাই, ক্ষুধাসুর মৃতপ্রায় হইয়া আসিয়াছে। হে শক্র, দেবতাদের প্রতি দেবদেবের বিশেষ কৃপা আছে সেই জন্যই নরলােকে হােমাগ্নি নির্ব্বাপিত হইয়াছে, নতুবা নব্য গব্য পরিপাক করিতে হইলে, ভাে পাকশাসন, দেবজঠরের সমস্ত অমৃতরস সুতীব্র অম্লরসে পরিণত হইত, অগ্নিদেবের মন্দাগ্নি এবং বায়ুদেবের বায়ুপরিবর্ত্তন আবশ্যক হইত, এবং সমস্ত দেবতার অমরবক্ষে অসহ্য শূল বেদনা অমর হইয়া বাস করিত।

 ইন্দ্র। হে জ্ঞানিশ্রেষ্ঠ, উক্তঘৃতের গুণাগুণ আমার অবিদিত নাই, যেহেতু যমরাজের নিকট সর্ব্বদাই তাহার বিবরণ শুনিতে পাই। অতএব