পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ব্যঙ্গকৌতুক
৬৯

 শীতলা। (হাসিয়া অস্থির হইয়া) মা গাে মা, তুমি এতাে হাসাতেও পারো! আদর ক’রে বেশ নামটি দিয়েচো যাহােক্! আনাে বদ্যি! কিন্তু বদ্যিতে ক’র্‌বে কী ভাই! কতো বদ্যির সাতপুরুষকে আমি সাতঘাটের জল খাইয়ে এসেচি—আমি কি তেম্‌নি মেয়ে!

 ঘেঁটু। (ইন্দ্রের গায়ের কাছে গিয়া তাঁহার পৃষ্ঠে হাত দিয়া) কী গো, ইন্দির দা! মুখে যে রা’টি নেই। রেতের বেলা গিন্নির সঙ্গে বকাবকি চুলােচুলি হ’য়ে গেচে না কি?

 ইন্দ্র। (সসঙ্কোচে সরিয়া গিয়া দূরস্থ আসন নির্দেশপূর্ব্বক) দেব, আসন গ্রহণে অনুমতি হৌক্‌।

 ঘেঁটু। এই যে এখানে ঢের জায়গা আছে। (ইন্দ্রের সহিত একাসনে উপবেশন) দাদা, আমার সঙ্গে তুমি নৌকোতা কোরাে না। আজ থেকে তুমি আমার দাদা, আমি তােমার ছােটো ভাই ঘেঁটু। (বাহুদ্বারা ইন্দ্রের গলবেষ্টন এবং ইন্দ্রকর্ত্তৃক অব্যক্ত কাতর ধ্বনি উচ্চারণ)

 শীতলা। (চন্দ্রের প্রতি) তুমি যাও কোথায়!

 চন্দ্র। মনােজ্ঞে, অন্য অন্তঃপুরে দেবীগণ ভর্ত্তৃপ্রসাদন ব্রতে তাঁহাদের এই সেবকাধমকে স্মরণ করিয়াছেন—অতএব যদি অনুমতি হয় তবে, হে হরিণশালীন নয়নে—

 শীতলা। কী ব’ল্লে? শালী? তা ভাই তাই সই! তােমার চাঁদমুখে সবই মিষ্টি লাগে। তা শালী যদি ব’ল্লে তবে কানমলাটিও খাও! (চন্দ্রের পার্শ্বে একাসনে বসিয়া চন্দ্রের কর্ণপীড়ন)

 ইন্দ্র। (চন্দ্রের প্রতি) ভগবন্ সিতকিরণমালিন্, তুমিই ধন্য। করুণস্পর্শে তরুণীকরকিসলয়ের অরুণরাগ এখনো তােমার কর্ণমূলে সংলগ্ন হইয়া আছে!

 শীতলা। (মনসার প্রতি লক্ষ্য করিয়া স্বগত) ম’লো। ম’লাে। আমাদের মন্‌সে হিংসেয় ফেটে’ ম’লো! আমি চাঁদের পাশে ব’সেচি