পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
ব্যঙ্গকৌতুক

 আশু। সন্দেহ ছিল? আপনি কি জান্‌তেন, আমি আস্‌বো?

 শ্যামা। তা জান্‌তেম বৈ কি।

 আশু। (আত্মগত) কী আশ্চর্য্য! আমাকে না জেনেই আমার জন্যে পূর্ব্ব হ’তেই অপেক্ষা ক’র্‌ছিলেন? তবু অন্নদা যােগবলে বিশ্বাস করে না! তাকে ব’ল্লে বােধ হয় ঠাট্টা ক’রেই উড়িয়ে দেবে! (আহারে প্রবৃত্ত)

 শ্যামা। (আত্মগত) ছেলেটি সােনার টুক্‌রাে! যেমন কার্ত্তিকের মতাে দেখ্‌তে, তেম্‌নি মধুঢালা কথা! আমাকে প্রথম থেকেই মাতাজি ব’লে ডাক্‌চে। পশ্চিম থেকে এসেচি কি না, তাই বােধ হয় মা না ব’লে মাতাজি ব’ল্‌চে। (প্রকাশ্যে) কিছুই খেলে না যে বাবা?

 আশু। আমার যা সাধ্য, তা’র চেয়ে বরঞ্চ বেশিই খেয়েচি মাতাজি।

 শ্যামা। তা হ’লে একটু ব’সো—আমি ডেকে নিয়ে আসি। (প্রস্থান)

 আশু। রাধে ব’লেছিলো বটে, মাতাজি কুমারী কন্যার দ্বারা মন্ত্রের ফল দেখিয়ে থাকেন। বশীকরণ-বিদ্যায় আমার একটু বিশ্বাস জন্মাচ্চে। এরি মধ্যে মাতাজির মাতৃস্নেহে আমার চিত্ত কেমন যেন আর্দ্র হ’য়ে এসেচে। আমার মা নেই, মনে হ’চ্চে যেন মাকে পেলেম! এ কোন্ মন্ত্রবলে কে জানে! মাতাজি স্নিগ্ধ দৃষ্টি দ্বারা আমার সমস্ত শরীর যেন অভিষিক্ত ক’রে দিয়েছেন। প্রথম দেখাতেই উনি যে আমাকে তাঁর পুত্রস্থানীয় ক’রে নিয়েছেন, এ যেন পূর্ব্বজন্মের একটা সম্বন্ধের স্মৃতি।

নিরুপমাকে লইয়া শ্যামার প্রবেশ

 আশু। (স্বগত) আহা কী সুন্দর! মাতাজির বশীকরণ-বিদ্যা যেন মূর্ত্তিমতী। এঁর মুখে কোনো মন্ত্রই বিফল হ’তে পারে না।

 শ্যামা। যাও, লজ্জা কোরো না মা! উনি যা জিজ্ঞাসা করেন, উত্তর দিয়াে।