পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বশীকরণ
৮৭

 আশু। কিন্তু আপনি বিরক্ত হবেন না, আমার যা মনে উদয় হ’চ্চে আমি বলি, তা’র পরে―

 শ্যামা। তা বাবা, সে-সব কথা এখন থাক্! আগে—

 আশু। আমি ব’ল্‌ছিলেম, গানে যে মন বশ হয়, সে-ও তো শব্দমাত্র—মনের সঙ্গে তা’র যদি যোগ থাকে, তা হ’লে মন্ত্রের শব্দশক্তিকেই বা না মানি কী ব’লে?

 শ্যামা। ঠিক কথা। মন্ত্রটা মানাই ভালো!

 আশু। (সোৎসাহে) আপনার কাছে এ-সব কথা বলা আমার পক্ষে ধৃষ্টতা,কিন্তু শাব্দী শক্তির সঙ্গে আত্মার যে একটি নিগূঢ় যোগ আছে তার স্বরূপ নিরূপণ করা কঠিন,—তর্কালঙ্কারমশায় বলেন,সে অনির্ব্বচনীয়। শাস্ত্রে যে বলে শব্দ ব্রহ্ম তা’র কারণ কী? ব্রহ্মই যে শব্দ বা শব্দই যে ব্রহ্ম, তা নয়—কিন্তু ব্রহ্মের ব্যবহারিক সত্তার মধ্যে শব্দস্বরূপেই ব্রহ্মের প্রকাশ যেন নিকটতম। (নিরুপমার প্রতি) আপনি তো এ সকল বিষয় অনেক আলোচনা ক’রেচেন—আপনার কি মনে হয় না, রূপরসগন্ধ-স্পর্শের চেয়ে শব্দই যেন আমাদের আত্মার অব্যবহিত প্রত্যক্ষের বিষয়। সেই জন্যই এক আত্মার সঙ্গে আর এক আত্মার মিলন-সাধনের প্রধান উপায় শব্দ। আপনি কী বলেন? (স্বগত) মেয়েটি ভারি লাজুক।

 শ্যামা। বলো না মা, যা জিজ্ঞাসা ক’র্‌চেন বলো! এতো বিদ্যে শিখ্‌লে, এই কথাটার উত্তর দিতে পার্‌চো না? বাবা, প্রথমদিন কি না, তাই লজ্জা ক’র্‌চে। ও যে কিছু শেখে নি, তা মনে কোরো না।

 আশু। ওঁর বিদ্যার উজ্জ্বলতা মুখশ্রীতেই প্রকাশ পাচ্চে। আমি কিছুমাত্র সন্দেহ ক’র্‌চিনে।

 শ্যামা। নিরু, মা, একবার ও-ঘরে যাও তো। (নিরুপমার প্রস্থান) দেখো বাবা, মেয়েটির বাপ নেই, সকল কথা আমাকেই কইতে হ’চ্চে— তুমি কিছু মনে কোরো না।