পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ডি প্রোফণ্ডিস্ । টেনিসনের রচিত উক্ত কবিতাটির যথেষ্ট আদর হয় নাই। কোন কোন ইংরাজ সমালোচক ইহাকে টেনিসনের অযোগ্য বলিয়া মনে করেন, অনেক বাঙ্গালী পাঠক ইংরাজ সমালোচকদের ছাড়াইয়া উঠেন । ইংলণ্ডের হাস্যরসাত্মক সাপ্তাহিক পত্র “পঞ্চে” এই কবিতাটিকে বিদ্রুপ করিয়া De Rotundis নামক একটি পদ্য প্রকাশিত হয় । আমরা এরূপ বিদ্রুপ কোন মতেই অনুমোদন করি না। এরূপ ভাব ইংরাজদের ভাব। কোন একটি বিখ্যাত মহান ভাবের কবিতাকে বিদ্রুপ করা তাহারা আমোদের মনে করেন। র্তাহাদের কেহ কেহ বলেন, যে, কোন কবির সন্ধান্ত পূজনীয় কবিতাকে অঙ্গহীন করিয়া রং চং মাথাইয়া ভাড় সাজাইয়া, রাস্তায় দাড় করাইয়া, দশ জন অলস লঘু-হৃদয় পথিকের দুই পাটি দাত বাহির করাইলে সে কবির পক্ষে অত্যন্ত শ্লাঘার বিষয়, ইহাতে ইংরাজ হৃদয়ের এক অংশের শোচনীয় অঙ্গহীনতা প্রকাশ পায় । আমাদের জাতীয় ভাব এরূপ নহে। যদি একজন বৃদ্ধ পূজনীয় ব্যক্তিকে অপদস্থ করিবার জন্য সভামধ্যে কেহ তাহার হৃদয়-নিঃস্থত কথাগুলি বিকৃত স্বরে উচ্চারণ করিয়া মুখভঙ্গী করিতে থাকে, তবে তাহাকে দেখিয়া রসিক পুরুষ মনে করিয়া যাহারা হাসে, তাহাদের ধোবা নাপিত বন্ধ করিয়া দেওয়া উচিত । টেনিসনের De Profundis কবিতাটি যে সমাদৃত হয় নাই, তাহার একটা কারণ, বিষয়টি অত্যন্ত গভীর, গুরুতর। আর একটা কারণ, ইহাতে এমন কতকগুলি ভাব আছে, যাহা সাধারণতঃ ইংরাজেরা বুঝিতে পারেন না, আমরাই সে সকল ভাব যথার্থ বুঝিবার উপযুক্ত। ইংরাজীবাগীশ শিক্ষিত বাঙ্গালীদের অনেকে ইংরাজী কাব্য দিশী ভাবে সমালোচনা করিতে ভয় পান। র্তাহারা বলেন, যদি ইংরাজ সমালোচকদের উক্তির সহিত দৈবাং অমিল হইয়া যায় ! না হয়, তাহা হইল । ইংরাজ সমালোচকের কথা ইংরাজী হিসাবে যেরূপ সত্য, আমাদের দেশীয় সমালোচকের কথা আমাদের দেশী-হিসাবে তেমনি সত্য । উভয়ই বিভিন্ন অথচ উভয়ই সত্য হইতে পারে । গোলাপ ফুল যদি তাহার প্রতিবেশী পাতাকে স্বৰ্য্যকিরণে সবুজ হইতে দেখিয়া মনে করে, স্বৰ্য্যকিরণে আমারও সবুজ হওয়া উচিত ও সবুজ হইয় উঠাই যদি তাহার জীবনের একমাত্র ব্রত হয়, তাহা হইলে নিশ্চয়ই ফুলমণ্ডলী তাহাকে পাগল বলিয়৷ আশঙ্কা করে । De Profundis কবিতাটি কবির সন্তানের জন্মোপলক্ষে লিখিত । সন্তানের }\9