পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆ রবীন্দ্র-রচনাবলী তোমাদের নিকটে যাহা প্রার্থনা করিতেছি তাহা কোন বিজিত জাতি কোন জেতৃজাতির নিকট বিশ্বাসপূর্বক প্রার্থনা করিতে পারিত না । ইহাই তোমাদের প্রতি যথার্থ ভক্তি, সেলাম করা বা জুতা খোলা নহে। আমাদের মধ্যে কেহ কেহ মুখে যাহাই বলি, যখনি তোমাদের নিকট উন্নত অধিকার প্রত্যাশা করি তখনি তোমাদের মহৎ ম্যুত্বের প্রতি কি সুগভীর আস্তরিক ভক্তি প্রকাশ হইয়া পড়ে ! তোমরা আপন রক্তপাত করিয়া ভারতবর্ষ অধিকার করিয়াছ এবং আপন প্রচণ্ড বলে এই আসমুদ্ৰ আহিমাচল বিপুল ভারত-ভূমিকে করতলন্যস্ত আমলকের ন্যায় আয়ত্ত করিয়া রাখিয়াছ । আমাদের মনে এ আশা কোথা হইতে জন্মিল যে তোমাদের ঐ মহিমান্বিত রাজপ্রাসাদের উচ্চ সোপান আমাদের পক্ষে অনধিগম্য নহে। অবশুই তোমাদের খাপের মধ্য হইতে যেমন তরবারি মধ্যে মধ্যে মহেন্দ্রের বজ্রের ন্যায় আপন বিদ্যুৎ আভা প্রকাশ করিয়াছে, তেমনি তোমাদের অস্তরের মধ্যে যে দীপ্ত মনুষ্যত্বের মহিমা বিরাজ করিতেছে তাহাও প্রবল শাসনের মধ্য হইতে মাভৈঃ শব্দে আপনাকে প্রকাশ করিয়াছে। নিম্নে ভূমিতলে দ্বারের নিকট যে প্রহরী বন্দুকের উপরে সঙ্গীন চড়াইয়া দাড়াইয়া থাকে তাহার অপ্রসন্ন মুখে নিষেধের ভাব দেখা যায়, কিন্তু যে জ্যোতিষ্মান পুরুষ প্রাসাদের শিখরদেশে দাড়াইয়া আছে সে আমাদিগকে অভয়দান করিয়া আহবান করিতেছে । ঐ দুমুখ প্রহরীটাকে আমরা ভয় করি এবং মাঝে মাঝে হযোগ পাইলেই তাহার শক্তিশেলের লক্ষ্য এড়াইয়। তাহার প্রতি নিস্ফল কটুকাটব্যও প্রয়োগ করিয়া থাকি কিন্তু সেই প্রসন্নমূৰ্ত্তি মহাপুরুষের মুখের দিকে আমরা আশান্বিত চিত্তে চাহিয়া আছি। ইহাকেই কি ভক্তির অভাব বলে ! এক ইংরাজ আমাদের প্রতি কট্‌মটু করিয়া তাকায় । আর এক ইংরাজ উপর হইতে আপন মহত্ত্বের প্রতি আমাদিগকে আহবান করে। এই জন্য ভয়ের অপেক্ষ ভক্তিই প্রবল হয় ৷ আশঙ্কার উপরে আশাই জয়লাভ করে। এবং আমাদের এই আশাই যথার্থ রাজভক্তি । দুঃখের সহিত বলিতে বাধ্য হইতেছি, আমাদের মধ্যে ক্ষুদ্র এক দল আছেন ইংরাজবিদ্বেষ তাহাদের মনে এতই বলবান যে কনগ্রেসের প্রতি কিছুতেই তাহার প্রসন্নদৃষ্টিক্ষেপ করিতে পারেন না। র্তাহারা নীরবে রাজবিদ্বেষ জাগাইয়া রাখিতে চান, ইংরাজের নিকট উপকার প্রত্যাশ করে বলিয়াই তাহারা কনগ্রেসের প্রতি বিমুখ । ইহাদের সহিত তুলনা করিয়া দেখিলেই কনগ্রেসের যথার্থ ভাব পরিস্ফুট হইয়া উঠিবে।