পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१२ রবীন্দ্র-রচনাবলী নিরাশ হইয়াছি, এবং আমাদের আহত হৃদয়ের বেদনায় ইংরাজি সভ্যতাকে আমরা সম্পূর্ণ অস্বীকার করিতে চেষ্টা করিতেছি। এমন সময়ে হিউম, ইউল, বেডরুবর্ণ কনগ্রেসকে অবলম্বন করিয়া আমাদের সেই নষ্ট বিশ্বাস উদ্ধার করিতে অগ্রসর হইয়াছেন । ইহাতে ষে কেবল আমাদের রাজনৈতিক উন্নতি হইবে তাহা নহে, ঈশ্বরের ইচ্ছায় আমরা যে নূতন শিক্ষা নূতন সভ্যতার আশ্রয়ে আনীত হইয়াছি তাহার প্রতি বিশ্বাস বলিষ্ঠ হইয় তাহার স্বফলসকল স্বেচ্ছাপূর্বক অস্তরের মধ্যে গ্রহণ করিতে পারিব এবং এইরূপে আমাদের সর্বাঙ্গীন উন্নতি হইবে। আমরা ইতিহাসে ও সাহিত্যে ইংরাজের যে মহৎ আদর্শ লাভ করিয়াছি সেই আদর্শ মূৰ্ত্তিমান ও জীবন্ত হইয়া আমাদিগকে মনুষ্যত্বের পথে অগ্রসর করিয়া দিবে। আমাদের প্রাচীন শাস্ত্রের মধ্যে যতই সাধু-প্রসঙ্গ ও সংশিক্ষা থাক তাহ এক হিসাবে মৃত, কারণ যে সকল মহাপুরুষেরা সেই সাধুভাবসকলকে প্রদান করিয়াছিলেন এবং তাহা হইতে পুনশ্চ প্রাণলাভ করিয়াছিলেন, তাহারা আর বর্তমান নাই ; কেবল শুষ্ক শিক্ষায় অসাড় জীবনকে চৈতন্যদান করিতে পারে না । আমরা মানুষ চাই । বর্তমান সভ্যতা যাহাদিগকে মহৎজীবন দান করিয়াছে, এবং র্যাহারা বৰ্ত্তমান সভ্যতাকে সেই জীবন প্রত্যপণ করিয়া সঞ্জীবিত করিয়া রাখিয়াছেন সেই সকল মহাপুরুষের মহৎ প্রভাব প্রত্যক্ষ অনুভব করিতে চাই তবে আমাদের শিক্ষা ও চরিত্র সম্পূর্ণতা লাভ করিবে। হিউম্কে নিকটে পাইয়া আমাদের ইংরাজি ইতিহাসশিক্ষার ফল সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হইতেছে—নতুবা আমরা যে সকল উদাহরণ দেখিয়াছি ও দেখিতেছি তাহাতে সে শিক্ষা অনেক পরিমাণে নিষ্ফল হইয়া যাইতেছিল। অতএব কনগ্রেসের দ্বারায় উত্তরোত্তর আমাদের যথার্থ রাজভক্তি বৃদ্ধি হইতেছে এবং মহৎ মনুষ্যত্বের নিকটসংস্পৰ্শ লাভ করিয়া আমাদের জীবনের মধ্যে অলক্ষিতভাবে মহত্ত্ব সঞ্চারিত হইতেছে ! আমরা কথা কহি বলিয়া যে ইংরাজি সম্পাদকেরা আমাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন, তাহাদের মনের ভাব যে কি তাহা ঠিক জানি না । বোধ করি তাহারা বলিতে চান তোমরা কাজ কর । ঠিক সেই কথাটাই হইতেছে! কাজ করিতেই চাই । সেই জন্যই আগমন । যখন আমরা কাজ চাহিতেছি তখন তোমরা বলিতেছ, কথা কহিতেছ কেন! আচ্ছা দাও কাজ ! অমনি তোমরা তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিবে, “না না সে কাজের কথা হইতেছে না, তোমরা আপন সমাজের কাজ কর ।”