পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ॐ श्रनिषत् बच ২১৯ বলিয়া তাহাকে লঘু করিয়া, ব্যর্থ করিয়া, মিথ্যা করিয়া, মকুন্তত্বের অবমাননা করিয়া আমরা কি ফল লাভ করিয়াছি ? কৰ্ত্তব্যকে খৰ্ব্ব করিবার অভিপ্রায়ে, জ্ঞান ভক্তি কৰ্ম্মকে, মানবপ্রকৃতির সৰ্ব্বোচ্চ শিখরকে কয়েক খণ্ড মৃৎপিণ্ডে পরিণত করিয়া খেলা করিতে করিতে আমরা কোনখানে আসিয়া উপনীত হইয়াছি ! আমরা নিজেকে অক্ষম অশক্ত নিকৃষ্ট অধিকারী বলিয়া স্বীকার করিয়া নিশ্চেষ্ট জড়ত্বকে আনন্দে বরণ করিয়া লইয়াছি । আমরা অকুষ্ঠিত স্বরে নিজেকে আধ্যাত্মিক শিশু বলিয়া প্রচার করি, এবং সৰ্ব্বপ্রকার মকুম্বোচিত কঠিন সাধনা ও মহৎ প্রয়াস হইতে নিষ্কৃতি, জ্ঞানীর নিকট হইতে মার্জনা ও ঈশ্বরের নিকট হইতে প্রশ্ৰয় প্রত্যাশাপূর্বক নিদ্রা, ক্রীড়া ও উচ্ছম্বল কল্পনার দ্বারা স্থখলালিত হইয়া নিস্তেজ নিবীৰ্য্য হইতে থাকি ; যুক্তিকে পঙ্গু করিয়া, ভক্তিকে অন্ধ করিয়া, আত্মপ্রত্যয়কে আচ্ছন্ন করিয়া, ব্রহ্মকে চিন্তা ও চেষ্ট হইতে দূরীভূত করিয়া, হৃদয় মন আত্মার মধ্যে আলস্য এবং পরাধীনতার সহস্ৰবিধ বীজ বপন করিয়া আমরা জাতীয় দুৰ্গতির শেষ সোপানে আসিয়া অবতীর্ণ হইয়াছি। অদ্য আমরা ভয়ে ভীত, দীনতায় অবনত, শোক তাপে জর্জর । আমরা বিচ্ছিন্ন, বিধবন্ত, হীনবল । আমাদের বাহিরে লাঞ্ছনা, অস্তরে গ্লানি, চতুর্দিকেই জীর্ণতা । আমাদের বাহিরে জাতিতে জাতিতে, বর্ণে বর্ণে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে যেরূপ বিচ্ছেদ, আমাদের নিজের প্রকৃতির মধ্যে আমাদের “চিত্তে বাচি ক্রিয়ায়াং” মনে বাক্যে ও কৰ্ম্মে বিরোধ, শিক্ষায় ও আচরণে বিরোধ, ধৰ্ম্মে এবং কৰ্ম্মে ঐক্য নাই—সেই কাপুরুষতায় এবং বিচ্ছিন্নতায় আমাদের সমাজ আমাদের গৃহ আমাদের অন্তঃকরণ অসত্যে আদ্যোপাস্ত জর্জরীভূত হইয়াছে । আমাদিগকে এক হইতে হইবে, সতেজ হইতে হইবে, ভয়হীন হইতে হইবে । অজ্ঞান এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা উন্নতশিরে দণ্ডায়মান হইব । কে আমাদের বল, কে আমাদের আশ্রয় ? সে কোন সৰ্ব্বব্যাপী সত্য, কোন অদ্বিতীয় এক, যিনি আমাদিগকে জাতিতে জাতিতে ভ্ৰাতায় ভ্ৰাতায় মনে বাক্যে ও কৰ্ম্মে একতা দান করিবেন ? সংসারের মধ্যে আমরা লোকভয়মৃত্যুভয়জয়ী পরম নির্ভর পাই নাই ; সংসার গুরুভার লৌহখৃঙ্খলে আমাদের অবমানিত মস্তককে আরও অবনত করিয়া রাখিয়াছে, আমাদের জড় দুর্বল দেহকে আরও গতিশক্তিবিহীন করিয়াছে। এই সকল ভয় এবং ভার এবং ক্ষুদ্রত হইতে ব্ৰহ্মই আমাদের একমাত্র মুক্তি । দিনে রাত্রে মুপ্তিতে জাগরণে অস্তরে বাহিরে আমরা তাহার মধ্যে আবৃত নিমগ্ন থাকিয় তাহার মধ্যে সঞ্চরণ করিতেছি—কোন প্রবল রাজা, কোন পরম শত্রু কোন প্রচণ্ড উপদ্রবে তাহা হইতে আমাদিগকে বঞ্চিত বিচ্ছিন্ন করিতে পরিবে না। অদ্য আমরা সমস্ত ভৗত ধিকৃত ভারতবর্ষ কি এক হইয়া করযোড়ে উৰ্দ্ধমুখে বলিতে পারি না যে,—