পাতা:তারাচরিত.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তারাচরিত।
৪৭

এরূপ নহে। বরং তিনি প্রতিবারেই আহ্লাদিত চিত্তে প্রাণেশ্বরের অপরিসীম উৎসাহকে অধিকতরই বর্দ্ধিত করিতেন। এবার কিন্তু তাঁহার মন ভিন্ন প্রকার চিন্তায় নিমগ্ন রহিল।

 নিশীথ সময়ে পৃথ্বীরাজ শিরোহিতে উপস্থিত হইলেন। উপস্থিত হইয়া ক্ষণকাল বিলম্ব না করিয়া প্রাচীর দিয়া কৌশলে প্রাসাদের উপরিভাগে উঠিয়া একেবারে প্রভুরাওয়ের শয়নাগারে প্রবেশ করিলেন এবং তাঁহার কণ্ঠদেশ সমীপে তরবারি ধারণ করিয়া বলিলেন, রে নরাধম তোকে এই করস্থিত তরবারি দ্বারা নিধন করিয়া ক্ষত্রিয় বংশের কলঙ্ক মোচন করি। এই বলিয়া তিনি সেই তীক্ষ্ণ ধার অসি উত্তোলন করিলেন। দেখিয়া প্রভুরাও প্রাণ ভয়ে শঙ্কিত হইয়া দয়া প্রার্থনা করিতে লাগিলেন। তাঁহার স্ত্রীও সহোদর সমীপে তাঁহার প্রাণদানের প্রার্থনা করিলেন এবং স্বীয় ভ্রাতাকে নানাবিধ মিষ্ট বাক্য বলিয়া পুর্ব্বকার দোষাপনোদন করিতে লাগিলেন। শুনিয়া পৃথ্বীরাজের ক্রোধ শমিত হইল। তিনি প্রভুরাওকে বলিলনে, যদি তুমি তোমার পত্নীর পাদুকাদ্বয় মস্তকে ধারণ করিয়া তাঁহার পাদস্পর্শ পূর্ব্বক তাঁহার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর তাহা হইলে আমি তোমার প্রাণদান করিব; নতুবা আমি তাহাতে অসমর্থ। প্রভুরাও শ্যালক সমীপে তাহাই করিলেন এবং বিদ্বষ বুদ্ধির বশবর্ত্তী হইয়া মনে মনে এই প্রতিজ্ঞা করিলেন যে যেমন পারি ইহার প্রতিফল দিব। তার পর শ্যালক ও ভগ্নিপতি আলিঙ্গন করিয়া উভয়ে মিষ্টালাপ করিতে লাগিলেন।