পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৫৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

4న 6 রবীন্দ্র-রচনাবলী > R একজন ফরাসী সৈনিক, এম্বোজ পেরিশ, আপন জীবন রক্ষার জন্য একটি ঘোড়ার কাছে ঋণী। তাহার দুই পা জৰ্ম্মান কামানের দ্বারা চূর্ণ হইয়া গিয়াছিল। যখন রাত হইল, তখন সে তার কাছে একটা বড়ো সাদা ঘোড়ার গুরুত্থাসের শব্দ শুনিতে পাইল, সেই ঘোড়াটি ছোটো ছোটো ঘাস চিবাইয়া খাইতেছিল। জন্তুটির আরোহী ছিল না ; সৈনিক তাহাকে শিস দিয়া ডাকিল। ঘোড়াটি আনন্দে মৃদু হেযাধ্বনি করিয়া উঠিল । নিজের জন্য স্বল্পমাত্র চেষ্টা করাও পেরিশ’র পক্ষে অসাধ্য ছিল । ঘোড়াটা যেন তাহ বুঝিতে পারিল, কেন না সে হাটু গাড়িয়া তাহার পাশে আসিয়া পড়িল এবং তাহার বক্ষের উদ্ধে মাথা রাখিয়া স্তব্ধ হইয়া রহিল। তাহার পরে সে উঠিল এবং সৈনিকের চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়াইল । অবশেষে থামিল, আহত ব্যক্তিকে আগাগোড়া ভ্ৰাণ করিল এবং তাহার পর সেই সৈনিকের চামড়ার কোমরবন্ধ দাতে করিয়া ধরিয়া সে তাহাকে মাটি হইতে তুলিল এবং ছুটিয়া চলিয়া গেল । SV) চীনে ম্যাজিষ্ট্রেট, কয়েকবার অভিযোগ-শুনানির পরেও হত্যাপরাধে অভিযুক্ত আসামীদলের মধ্যে প্রকৃত কোন ব্যক্তি স্বহস্তে সাংঘাতিক আঘাত করিয়াছে, তাহ স্থির করিতে না পারিয়| বন্দীদিগকে জানাইলেন যে, তিনি সত্যনির্ণয়ের জন্য অশরীরী সত্তার সাহায্য লইতে যাইতেছেন । তদনুসারে তিনি অপরাধীর কৃষ্ণবেশ পরিহিত ঐ অভিযুক্ত ব্যক্তিদিগকে একটি গোলাবাড়িতে লইয়া গিয়া, দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরাইয়া ঘরের চারিধারে সন্নিবেশিত করিলেন। শীঘ্রই একজন অভিযোক্ত দিব্যদূত তাহাদের মধ্যে আসিয়া অপরাধীর পৃষ্ঠদেশ চিহ্নিত করিয়া যাইবেন, এই কথা তাহাদিগকে বলিয়া তিনি বাহির হইয়া গেলেন এবং দরজা বন্ধ করাইয়া ঘর অন্ধকার করিয়া দিলেন। অল্পক্ষণ পরে যখন দরজা খুলিয়া দিয়া ঐ লোকগুলিকে বাহিরে আসিতে আহবান করা হইল, তখন অবিলম্বেই দেখা গেল যে, তাহাদের মধ্যে একজনের পৃষ্ঠে একটি সাদা চিহ্ন রহিয়াছে। দেওয়াল সম্প্রতি চূণকাম হইয়াছে, তাহা না জানিয়া, ঐ ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে নিজেকে আপদ হইতে বাচাইবার ইচ্ছায় দেওয়ালের দিকে পিঠ ফিরাইয়া দাড়াইয়াছিল।