পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনুবাদ-চর্চ। Qbr。 দিল, “মহাশয়, তাড়াতাড়ি ঢুকিয়া পড়ুন।” আমি সত্বর নিজেকে গাড়ীর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করিলাম । >b^○ আমি উপবিষ্ট হইলে পর, সারথি দরজার হাগুলে হাত রাখিয়া আমাকে বলিল, “মহাশয়, জানেন কি যে, ঘণ্টা উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে ?” আমি বলিলাম, “কিসের ঘণ্টা ?” “আটটা।” “ঠিক কথা । আমি ঐ রকমই বাজিতে শুনিয়াছি বটে।” উত্তরে লোকটি বলিল, “সাহেব, জানেন যে সন্ধ্যার আটটার পর ভাড়ার পরিবর্তন হয়। রওয়ান হইবার পূর্বেই ভাড়া দেওয়া দস্তুর ” আমি টাকার থলিট টানিয়া বাহির করিয়া উত্তর দিলাম, “নিশ্চয়ই, কত ভাড়া ?” লোকটি মিষ্ট-স্বরে উত্তর দিল, “বারো ফ্রাঙ্ক, সাহেব ।” তৎক্ষণাং কাৰ্য্যপ্রণালীটি বুঝিলাম। প্রাতঃকালে ইহারা লোকপিছু তিন স্তু হারে দর্শকদিগকে বিয়ারিজে গাড়ী করিয়া লইয়া যাইবে বলিয়া ঘোষণা করে এবং তখনই ভীড় জমিয়া যায়। সন্ধ্যায় লোকপিছু বারো ফ্রাঙ্ক হারে ইহারা সেই ভীড়টিকে Bayonne-এ ফিরাইয়া আনে । >し”8 ৩১শে মে, ৮২ । আজ হইতে আমি চৌষট্টি বৎসরে পা দিলাম। যে পক্ষাঘাত রোগ প্রায় দশ বৎসর পূৰ্ব্বে আমাকে প্রথম আক্রমণ করিয়াছে, তখন হইতেই নানা দশান্তরের মধ্য দিয়া থাকিয়াই গিয়াছে, এখন যেন তাহ বেশ শান্তভাবে স্থায়ী অাডডা গাড়িয়া বসিয়াছে এবং সম্ভবতঃ এই ভাবেই চলিবে । আমি সহজেই ক্লান্ত হইয়৷ পড়ি, বেশি দূর হাটিতে পারি না ; কিন্তু আমার স্ফূৰ্ত্তি সেরা দরের। আমি প্রায় প্রতিদিনই বাহিরে ঘুরিয়া বেড়াই—কখনও কখনও রেলে কি নৌকাপথে শত শত মাইল জুড়িয়া এক একটি লম্বা চক্ৰ দিয়া আসি, বেশির ভাগ সময় খোলা হাওয়ায় থাকি—রোদপোড়া ও মোটাসোটা হইয়াছি ; লোকযাত্রা, জনসাধারণ, সমাজের উন্নতি ও সাময়িক সমস্ত সকল সম্বন্ধে আমার ঔংস্থক্য বজায় রাথি । দিনের দুইতৃতীয়াংশ সময় আমি বেশ আরামে থাকি। আমার মানসিক শক্তি বরাবর যেমন ছিল, সেইরূপ সম্পূর্ণ অবিকৃতই আছে ; যদিও শারীরিক হিসাবে আমি অৰ্দ্ধ অসাড় এবং যত দিন বাচি আমার এইরূপ থাকা সম্ভবপর। কিন্তু আমার জীবনের প্রধান উদ্দেশু সিদ্ধ হইয়াছে বলিয়া মনে হয়—আমার বন্ধুরা একান্ত নিষ্ঠাবান ও অনুরক্ত, আত্মীয়স্বজন স্নেহশীল—আর শত্রুদিগকে বাস্তবিক হিসাবের মধ্যেই ধরি না।