পাতা:প্রবাসী (ঊনত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

): আকবরের মহতী প্রবৃত্তির এমনি পুণ্য প্রভাব ছিল যে তিনি যেদিকে চাহিতেন, সে দিকেই বিজয় ও সফলতা অগ্রসর হইয়া তাহাকে অভ্যর্থনা করিত। র্তাহার রাজত্বকালে অনেক অনেক দেশ ও দুর্গ জয় হয়। এই সব পূর্ববর্তী সম্রাটদের ক্ষমতা ও ঐশ্বৰ্য্য ইহা হইতেই অতি সহজে বুঝা যায় যে আলমগীর বাদশাহ তাহাদের রাজনীতি অল্পসরণ মাত্র করিতে গিয়া বিফল এবং বিব্রত হইয়া পড়িয়াছেন । র্তাহাদেরও জজিয়া ধাৰ্য্য কৱিবার শক্তি ছিল। কিন্তু তাহারা গোড়ামীকে হৃদয়ে স্থান দেন নাই, কারণ র্তাহারা জানিতেন যে উচ্চ নীচ সব মনুষ্যকে ঈশ্বর নানা বিভিন্ন ধৰ্ম্মবিশ্বাস ও প্রবৃত্তির দৃষ্টান্ত দেখাইবার জন্যই স্বষ্টি করিয়াছেন। তাছাদের দয়া-দাক্ষিণ্যের খ্যাতি তাহাদের স্মৃতিচিহ্নরূপে অনন্তকালের ইতিহাসে লিখিত রহিবে, এবং এই তিন পবিত্ৰ-আত্ম [ সম্রাটের ] জল্প প্রশংসা ও শুভপ্রার্থনা চিরদিন ছোটবড় সমস্ত মানবজাতির কণ্ঠে ও হৃদয়ে বাস করিবে । লোকের প্রাণের আকাজক্ষার ফলেই সৌভাগ্য দুর্ভাগ্য আসে। অতএব, তাহাদের ধনসম্পদ দিন দিন বাড়িয়াছিল, ঈশ্বরের জীবগুলি তাছাদের স্বশাসনগুণে শাস্তিতে ও নিরাপদের শয্যায় বিরাম করিতে লাগিল এবং তাঙ্গদের সর্ব কৰ্ম্মই সফল হইল । - আর আপনার রাজত্বে ? অনেক দুগ ও প্রদেশ আপনার হাতছাড়া হইয়াছে ; এবং বাকীগুলিও শীঘ্রই হইবে, কারণ তাহীদের ধ্বংস ও ছিন্নভিন্ন করিতে আমার পক্ষে চেষ্টার অভাব হুইবে না। আপনার রাজ্যে প্রজার পদদলিত হইতেছে, প্রত্যেক;গ্রামের উৎপন্ন দ্রব্য কমিয়াছে,—এক লাখের স্থানে এক হাজার, হাজারের স্থানে দশ টাকা মাত্র আদায় হয় ; আর তাছাও মহা কষ্ট্রে। বাদশাহ ও রাজপুত্রদের প্রাসাদে আজ দারিদ্র্য ও ভিক্ষাবৃত্তি স্থায়ী আবাস করিয়াছে ; ওমর ও আমলাদের অবস্থা ত সহজেই কল্পনা করা যাইতে পারে। আপনার রাজত্বকালে সৈন্যগণ অস্থির, বণিকেরা অত্যাচারপীড়িত, মুসলমানের বঁাদিতেছে, হিন্দুর। জলিতেছে, প্রায় সকল প্রজারই রাত্রে রুটি জোটে না এবং দিনে মনস্তাপে করাঘাত করায় গাল রক্তবর্ণ হয় । প্রবাসী -কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৬ [ ২৯শ ভাগ, ২য় খণ্ড এই দুর্দশার মধ্যে প্রজাদের উপর জজিয়ার ভার চাপাইয়া দিতে কি করিয়া আপনার রাজ-হৃদয় আপনাকে প্রণোদিত করিয়াছে ? অতি শীঘ্রই পশ্চিম হইতে পূৰ্ব্বে এই অপযশ ছড়াইয়া পড়িবে যে হিন্দুস্থানের বাদশাহ ভিক্ষুকের থলিয়ার প্রতি লুদ্ধ-দৃষ্টি ফেলিয়া, ব্রাহ্মণপুরোহিত, জৈন যতী, ধোগী, সন্ন্যাসী, বৈরাগী, দেউলিয়া, ভিখারী, সৰ্ব্বস্বহীন ও দুর্ভিক্ষ-পীড়িত লোকদের নিকট হইতে জজিয়া লইতেছেন ! ভিক্ষার ঝুলি লইয়া কাড়কাড়িতে আপনার বিক্রম প্রকাশ পাইতেছে । আপনি তাইমুর-বংশের স্বনাম ও মান ভূমিসাং করিয়াছেন! বাদশাহ, সালাম ! যদি আপনি খোদার কেতাব (অর্থাৎ কুরাণ)-এ বিশ্বাস করেন, তবে দেখিবেন সেখানে লেখা আছে যে ঈশ্বর সর্বজনের প্রভূ রব-উল-আলমীন), শুধু মুসলমানের প্রভু রব-উল-মুসলমান নছেন। বস্তুত:, ইসলাম ও হিন্দুধৰ্ম্ম দুইটি পার্থক্যব্যঞ্জক শব্দ মাত্র ; যেন দুইটি ভিন্ন রং—যাহা দিয়া স্বৰ্গবাসী চিত্রকর রং ফলাইয়া মানবজাতির [ নালাবণে রঙীন ] চিত্ৰপট পূর্ণ করিয়াছেন। মসজিদে র্তাহাকে স্মরণ করিবার জদুই আজান উচ্চারিত হয় । মন্দিরে তাহার অন্বেষণে হৃদয়ের ব্যাকুলতা প্রকাশ করিবার জন্যই ঘণ্টা বাজান হয়। অতএব, নিজের ধৰ্ম্ম ও ক্রিয়াকাণ্ডের জন্য গোড়ামী করা ঈশ্বরের গ্রন্থের কথা বদল করিয়৷ দেওয়া ভিন্ন আর কিছুই নহে । চিত্রের উপর নূতন রেখা টানিলে আমরা দেখাষ্ট যে চিত্রকর ভুল স্ট্রাকিয়াছিল । প্রকৃত ধৰ্ম্ম অনুসারে জজিয়া কোনমতেই ষ্টায্য নহে । রাজনীতির দিক হইতে দেখিলে, জজিয়া শুধু সেই যুগেই ন্তাষ্য হইতে পারে যখন স্বন্দরী স্ত্রীলোক স্বর্ণ অলঙ্কার পরিয়া এক প্রদেশ হইতে অপর প্রদেশে নিৰ্ভয়ে নিরাপদে যাইতে পারে। কিন্তু, আজকাল আপনার বড় বড় নগর লুঠ হইতেছে, গ্রামের ত কথাই নাই। জজিয়া ত স্থায়বিরুদ্ধ, তাহা ছাড়া ইহা ভারতে এক নূতন অত্যাচার ও ক্ষতি কারক । যদি আপনি মনে করেন যে প্রজাদের পীড়ন ও ভয়ে হিন্দুদের দমাইয় রাখিলে আপনার ধাৰ্ম্মিকতা প্রমাণিত