পাতা:প্রবাসী (ঊনত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য-বিচার ঐরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্র পরিবৎ সভায় “সাহিত্য-বিচার’ সম্বন্ধে ষে আলোচনা করেছি, সেইটি লিখে দেবার জন্তে আমার পরে অহুরোধ আছে। মুখে-বল-কথা লিখে বলায় নূতন আকার ধারণ করে। তা ছাড়া আমার মতে অসাধারণ বিস্মৃতিশক্তিশালী লোক এক দিনের কথিত বাণীকে অন্ত দিনে যথাযথরূপে অকুলেখনে অক্ষম। অতএব সেদিনকার বাক্যের ইতিহাস অনুধাবনের বৃথা চেষ্টা না করে বক্তব্য বিষয়টার প্রতিই লক্ষ্য করব । প্রথমে বলে রাখি, যাকে সাধারণত আমরা সাহিত্যসমালোচন বলি সাহিত্য-বিচার শব্দটাকে আমি সেই অর্থে ব্যবহার করেছি। আলোচনা অর্থে বুঝি পরিক্রম, বিযয়টির উপর পায়চারি করে বেড়ানো, আর বিচারটি হ’ল, পরিচয়—তাকে যাচাই করা। বিশেষ রচনার পরিচয় দেওয়াই সাহিত্য-বিচারের লক্ষ্য । কিন্তু পরিচয় তো অনেক রকম আছে। আমরা প্রায়ই ভুল করি, এক-পরিচয়ের জায়গায় আর এক পরিচয় দাখিল করি ; যেখানে এক গ্লাস জল আনা আবশুক সেখানে “তাড়াতাড়ি এনে দিই আধখান বেল।” জলের চেয়ে বেলে ভার অাছে, সার আছে, সেই কারণে বাজারে তার দামও বেশি, কিন্তু যে তুষাৰ্ত্ত মানুষ জল চায় সে মাথায় হাত দিয়ে পড়ে । সাহিত্য-বিচারে পরিচয়টি সাহিত্যিক পরিচয় হওয়া চাই একথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু ভাগ্যদোষে আমাদের দেশে বাহুল্য নয়। কল্পনা করা যাক্ আমাদের সভাপতি স্বরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত মহাশয় সাহিত্যের বিষয়। পরিচয় দেবার উপলক্ষ্যে বিচারক হয়তো গৰ্ব্ব করে বলে উঠবেন, छांछि८ड खेनि ६वना । छिखांश बन्टबन, “७ठ्ठ बांश् ” তখন বিচারক আবার গৰ্ব্ব করে বলতে পারেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে উনি অধ্যাপনা করেন তার পদগৌরব এবং অর্থগৌরব প্রচুর।” জিজ্ঞায় আবার বলবেন, “এহ বাহা ।” তখন বিচারক স্বর আরো চড়িয়ে বলবেন, “উনি তত্ত্বশাস্ত্রে অসাধারণ পণ্ডিত।” হায়রে, এও সেই আধখানা বেল। ঐতিহাসিক সাহিত্যে এসব তথ্য সযত্নে সংগ্রহ করা চাই, কিন্তু রস-সাহিত্যে এগুলিকে সযত্বেই বর্জন করতে হবে। উৎসাহী হোমিওপ্যাথ বাল্মীকিকে প্রশ্ন করে যে, বনবাসকালে নিঃসন্দেহ মাঝে মাঝে রামচন্দ্রের ম্যালেরিয়া হয়েচে, তখন তিনি নিজের কী রকম চিকিৎসা করতেন । বাল্মীকি র্তার জটাশ্মশ্র নিয়ে চুপ করে থাকেন, কোনো উত্তর দেন না । ঐতিহাসিক রাম-চরিতে রামচন্দ্রের সমর্থিত চিকিৎসাপদ্ধতি মূল্যবান তথ্য সন্দেহ নেই, কিন্তু সাহিত্যিক রামচরিতে ওকে স্থানে দেওয়া অসম্ভব । এমনতরো বহুসহস্র অতি প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই রামায়ণ সম্ভবপর হয়েচে, তথাপি সেটা সপ্তকাগুর কম হল না । আমি যে কথাটি বলতে গিয়েচি, সে হচ্চে এই যে, সাহিত্যের বিষয়টি ব্যক্তিগত ; শ্রেণীগত নয় । এখানে “ব্যক্তি” শব্দটাতে তার ধাতুমূলক অর্থের উপরেই জোর দিতে চাই। স্বকীয় বিশেষত্বের মধ্যে ষা ব্যক্ত হয়ে উঠেছে, তাই ব্যক্তি। সেই ব্যক্তি স্বতন্ত্র। বিশ্বজগতে তার সম্পূর্ণ অনুরূপ আর দ্বিতীয় নেই। ব্যক্তিরূপের এই ব্যক্ততা সকলের সমান নয়, কেউবা ঝুম্পষ্ট, কেউ বা অস্পষ্ট । আস্তত, যে মাছৰ উপলব্ধি করে. তার পক্ষে । সাহিত্যের ব্যক্তি কেবল মাহূব নয়, বিশ্বের যে-কোনো পদার্থই, সাহিত্যে স্থম্পষ্ট তাই ব্যক্তি, জীবজন্তু গাছপালা নদী পৰ্ব্বত সমুদ্র ভালো জিনিষ মন্দ জিনিব বস্তুর জিনিষ ভাবের জিনিয সমস্তই ব্যক্তি-নিজের ঐকাস্তিকতায় সে যদি ব্যক্ত না হ’ল, তা হলে সাহিত্যে সে লজ্জিত । যে গুণে এরা সাহিত্যে সেই পরিমাণে ব্যক্ত হয়ে