পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[  ]

 প্রকৃতির বিশালরাজ্যে ভারতবর্ষ অতি সুন্দরস্থানে অবস্থিত। ইহার তিন দিকে অপার অনন্ত জলরাশি; আর একদিকে অনন্তসৌন্দর্য্যময়, অনন্ত শোভার ভাণ্ডার, অভ্রভেদী অটল গিরিবর। সুতরাং ভারতবর্ষ প্রায় চারিদিকেই প্রকৃতিকর্ত্তৃক সুরক্ষিত। স্থলপথে দুর্গম পার্ব্বত্য ভূমি, সঙ্কীর্ণ গিরিসঙ্কট অতিক্রম না করিলে ভারতবর্ষে প্রবেশ করিতে পারা যায় না, আর জলপথে মহাসাগরের তরঙ্গবিক্ষোভী বারিরাশি অতিবাহিত করিতে না পারিলে, ভারতের উপকূলে পদার্পণ করা যায় না। বাহির হইতে দেখিতে গেলে ভারতবর্ষে প্রবেশ করা, বহু আয়াস ও বহু কষ্টসাধ্য বলিয়া বোধ হয়। যেহেতু, পূর্ব্বেই উক্ত হইয়াছে যে, ভারতবর্ষ প্রকৃতির দুর্গম ও দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীরে সীমাবদ্ধ। কিন্তু প্রকৃতি এত যত্ন করিয়া, যে ভারতবর্ষ আগুলিয়া রাখিয়াছেন, তাহাও চিরকাল বিভিন্ন জাতির আক্রমণের বহির্ভূত থাকে নাই। ইতিহাস দেখাইয়া দিতেছে, ভারতবর্ষের ন্যায় আর কোনও ভূখণ্ড বহুবার বহু বিদেশীকর্ত্তৃক আক্রান্ত হয় নাই। যে সুদূর বিস্তৃত পর্ব্বতমালা ভারতের শীর্ষদেশে বিরাট পুরুষের ন্যায় দণ্ডায়মান থাকিয়া অপূর্ব্ব গাম্ভীর্য্যের পরিচয় দিতেছে, তাহার পশ্চিম দিকে একটি গিরিসঙ্কট প্রকৃতির বিশাল প্রাচীর ভেদ করিয়া দিয়াছে। আফ্ গানিস্থান হইতে ঐ গিরিসঙ্কট অতিক্রম করিতে পারিলেই ভারতবর্ষে উপনীত হওয়া যায়। অতি প্রাচীনকাল হইতে যাঁহারা রাজ্যবিস্তার, প্রভুত্বস্থাপন বা সম্পতিলুণ্ঠনের আশায় ভারতবর্ষে আসিয়াছেন, তাঁহারা প্রায় সকলেই ঐ পথ অবলম্বন করিয়াছেন। ভারতবর্ষ, ঐ পথে নয়জন বিদেশী ভূপতিকর্ত্তৃক আক্রান্ত হইয়াছে।

 এই সকল আক্রমণে সময়ে সময়ে ভারতবর্ষের সমূহ ক্ষতি হইয়াছে। ভারতবাসীদিগকে সময়ে সময়ে অশ্রুতপূর্ব্ব দৌরাত্ম্য ও অত্যাচার সহিতে হইয়াছে। শেষে দিল্লীর রত্নসিংহাসনে হিন্দু ভূপতির পরিবর্ত্তে