পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ—স্বামীপরিত্যক্তা ও বিধবাদের অবস্থা (8S উপায়ে মামুষের মনুষ্যত্ব বজায় থাকে এবং শান্তিও রক্ষিত হয়, তাহা আবিষ্কার ও অবলম্বন করাই শ্রেষ্ঠ পন্থা । যাহারা ধনী লোক ও ব্যবসা বাণিজ্য করে, তাহারা সশস্ত্র হইলেও, স্বয়ং আত্মরক্ষা ও সম্পত্তি রক্ষা করিবার অবসর তাহাদের কম। রক্ষী তাহাদের চাই । কিন্তু কলিকাতায় তাহারা সকলে নিজেদের জন্যও অস্ত্র পাইতেছে না, এবং অনেক রক্ষীও নূতন গুণ্ড৷ আইন দ্বারা তাড়িত হইতেছে। অথচ দাঙ্গা হাঙ্গামার সময় দেখা গিয়াছে, যে, পুলিস তাহাঁদের সম্পত্তি ও তাহাদিগকে রক্ষা করিতে পারে নাই । ভবিষ্যতেও যে বেশী পরিবে, এমন মনে হয় না । বস্তুতঃ পুলিসের সংখ্যা ও অস্ত্রসজ্জা এরূপ অসম্ভব যাহাতে আত্মরক্ষায় অসমর্থ সকল লোক রক্ষিত হইতে পারে। হইতে পারে, যে, অনেক রক্ষী দাঙ্গার সময় কৰ্ত্তব্য করিতে গিয়া লড়িতে বাধ্য হইয়াছিল। কিন্তু তজ্জন্য তাহীদের অন্য শাস্তি, অপরাধ প্রমাণ হইলে, দেওয়া যাইতে পারে ; বহিষ্কার অমুচিত । লাটসাহেবের বক্তৃত হইতে বুঝা যায়, যে, নূতন গুগু আইন প্রধানতঃ উত্তর ভারতের অবাঙালীদের বিরুদ্ধে প্রযুক্ত হইবার জন্যই প্রণীত হইয়াছে। ব্রহ্মদেশে যখন অপরাধী ভারতীয় ও অন্য বিদেশীদের বহিষ্কার আইন বিধিবদ্ধ হয়, তখন বঙ্গ ও ভারতের অন্য সব প্রদেশে তাহার বিরুদ্ধে আন্দোলন হইয়াছিল ; এ কথাও বলা হইয়াছিল, যে, সাম্রাজ্যের এক অংশের অন্য অংশের লোকদের বিরুদ্ধে আইন করা উচিত নয়। কিন্তু নূতন গুণ্ড আইনের বেলায় বাংলাদেশে ব্যবস্থাপক সভার কোন সভ্য এবং কোন খবরের কাগজের সম্পাদক আইনটার বিরুদ্ধে এরূপ আপত্তি তুলেন নাই। ব্রহ্মদেশের আইন তবু প্রকাশ্ব আদালতে বিচারের পর দণ্ডিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রযুক্ত হইবে । বাংলাদেশের আইনটা কোন আদালতে প্রকাশু বা অপ্রকাশ্ব বিচারের পর প্রযুক্ত হইবে না ; বহিষ্কৃত ব্যক্তি কোন আদালতে আপীল করিতেও পরিবে না। আমরা এরূপ বেআইনী আইনের বিরোধী আগেও ছিলাম, এখনও আছি । বে-আইনী আইন দ্বারা আইনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করিবার চেষ্টাবেশ উপভোগ্য বটে। আত্মরক্ষার জন্য পশ্চিম ও বাঙালী হিন্দুরা একযোগে কাজ করিয়াছে। নূতন গুণ্ড আইন প্রধানতঃ পশ্চিমাদের জন্য অভিপ্রেত হওয়ায় রাজনৈতিক ভেদনীতি কতকটা সফল হইতে পারে কি না, তাহ বাঙালী ও পশ্চিম হিন্দুরা ভাবিয়া দেখিবেন, এবং যাহাতে এরূপ সফলতা না জন্মে, তাহার উপায়বিধান করিবেন। করা : ব্রাহ্মরা হিন্দু কি না হিন্দু মহাসভা “হিন্দু'র যে সংজ্ঞা দিয়াছেন, তদনুসারে ব্রাহ্মরাও হিন্দু। এরূপ সংজ্ঞা নির্দিষ্ট হইবার পূৰ্ব্বেও আমরা হিন্দুবংশজাত ব্রাহ্মদিগকে হিন্দুই মনে করিতাম, এবং একবার প্রবাসীর পুস্তকপরিচয়-বিভাগে তাহার কারণও নির্দেশ করিয়াছিলাম। আইনের চক্ষে এরূপ ব্রাহ্মরা হিন্দু কি না, তাহার মীমাংসা পঞ্জাবের পরলোকগত সর্দার দয়ালসিং মাজিঠিয়ার সম্পত্তি ঘটিত মোকদ্দমায় প্রিভি কৌন্সিল করিয়াছিলেন। ঐ সৰ্ব্বোচ্চ আদালতের মতে ব্রাহ্মদের হিন্দুত্বই সিদ্ধ হইয়াছিল । সম্প্রতি সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের পরলোকগত সম্পাদক ও সভাপতি রজনীনাথ রায় মহাশয়ের সম্পত্তির অধিকারী হইবার জন্য র্তাহার পৌত্রদের পক্ষ হইতে র্তাহার পুত্রবধু যে মোকদ্দমা করেন, তাহাতে, গত ৫ই জুনের বেঙ্গলীতে প্রকাশিত, আদালতের রায়ে ইহাই বলা হইয়াছে, যে, রজনীনাথ রায় মহাশয় মৃত্যুকাল পর্য্যন্ত হিন্দুই ছিলেন । সম্পত্তি র্তাহার পৌত্রেরাই পাইবেন । পৌত্রদের দাবীর বিরোধী ছিলেন, রায়মহাশয়ের অন্যতম কন্যা শ্ৰীমতী মায়াদেবী ও র্তাহার কোন কোন ভগিনী । এই শ্ৰীমতী মায়াদেবীই কি খবরের কাগজে ব্রাহ্মদের অহিন্দুত্ব প্রমাণ করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন ? মহাবীর আবদুল করিমের আত্মসমর্পণ ফ্রান্স ও স্পেনের সম্মিলিত চেষ্টায় মরক্কোর রিফদের স্বাধীনতা-সংগ্রাম আপাততঃ ব্যর্থ হইল—তাহাদের নেতা মহাবীর আবদুল করিমকে আত্মসমর্পণ করিতে হইয়াছে। কিন্তু পৃথিবীর যে-কোন দেশের যে-কোন মানুষ স্বাধীনতার মূল্য বুঝেন এবং সকল মানুষের জন্য স্বাধীনতার দাবী করেন, তিনিই এই মহাবীরকে শ্রদ্ধার সহিত নমস্কার করিবেন, এবং স্পেন ও ফ্রান্সের কার্য্যকে নিন্দনীয় মনে করিবেন। স্বামীপরিত্যক্ত ও বিধবাদের অবস্থা বাঙালী মেয়েদের আর্থিক অবস্থা সম্বন্ধে শ্ৰীযুক্ত লেডী অবল বস্থর সহিত “আর্থিক উন্নতি’র সম্পাদক অধ্যাপক বিনয়কুমার সরকারের যে কথাবার্ত হইয়াছিল, তাহ। উক্ত পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় ছাপা হইয়াছে। তাহার কিয়দংশ উদ্ধত করিতেছি । প্রশ্ন—এখন আপনাকে আর-একটি বিষয়ে প্রশ্ন করিতে চাই ; সেটি হচ্ছে বাঙালী মেয়েদের আর্থিক অবস্থা সম্বন্ধে। উত্তর—তাদের আর্থিক অবস্থা অতিশয় হীন ।