পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ১৬ ]

এবং এই রোগশোকময়—এই পাপতাপজর্জ্জরিত সংসারে, জীবনতোষিণী শান্তির অমৃতময়ী ধারায় সকলকে সন্তৃপ্ত করেন। বর্ত্তমান সময়েও এরূপ দৃষ্টান্ত বিরল নহে। স্বর্গীয়া মহারাণী শরৎসুন্দরীর পবিত্র নাম আমাদের জাতীয় গৌরবের বিষয়ীভূত হইয়া রহিয়াছে। শরৎসুন্দরী অল্পবয়সেই পতিহীনা, কঠোরব্রহ্মচর্য্যপরায়ণা তপস্বিনী; প্রভূত সম্পত্তির অধিকারিণী হইয়াও, চিরকাল বিষয়বাসনাপরিশূন্যা, পবিত্রতাময়ী মহাদেবী। আধুনিক নারীসমাজে যাহা শিক্ষা বলিয়া অভিহিত হইতেছে, সে অংশে শরৎসুন্দরী অশিক্ষিতা হইতে পারেন, কিন্তু আধুনিক শিক্ষাভিধানে এই অশিক্ষিতা রমণী পবিত্র চরিত্রে, গভীর হিতৈষিতায়, অপূর্ব্ব ধর্ম্মাচরণে, যেরূপ অশান্তির মধ্যে শান্তির রাজ্যবিস্তার করিয়াছিলেন, তাহা সমগ্র সভ্যসমাজের সমগ্র সুশিক্ষিতা রমণীরও অনুকরণীয়।

 ফলতঃ, সকল বিষয়েই বিজাতীয় ভাবের অনুকরণ করিলে যেরূপ জাতীয়ভাব বিনষ্ট হয়, সেইরূপ বলবীর্য্যেরও হানি হইয়া থাকে। যাহা আমাদের জাতীয় প্রকৃতির সহিত সমঞ্জসীভূত, আমাদের তদনুসারেই চলা কর্ত্তব্য। আমাদের জাতীয় রীতি অনুসারে যে সকল ব্যায়াম ছিল, এখন তৎসমুদয়ের বিলোপ হইয়াছে, আমাদের মহিলাগণ পূর্ব্বে শ্রমশীলা ছিলেন, আধুনিক শিক্ষায়, ইদানীন্তন সময়ে মহিলারা বিলাসিনী হইয়া পড়িতেছেন। প্রকৃতির পরিবর্ত্তনে,— অনুকরণের হীনতায় আমাদের দিন দিন অধোগতি হইতেছে। সমাজহিতৈষী সংস্কারক, ললাটফলক আকুঞ্চিত করিয়া, বিস্ফারিতনেত্রে গম্ভীরভাবে কহিতেছেন, বাল্যবিবাহ সমস্ত দোষের আকর। এই জন্য ভারতবাসীর বলবীর্য্যের অপচয় ঘটিতেছে। ইঙ্গরেজ বাল্যবিবাহের দোষকীর্ত্তন করিতেছেন, সংস্কারকও তদনুকরণে যৌবনবিবাহের গৌরবঘোষণায় প্রবৃত্ত হইতেছেন। যখন আমাদের দেশে