পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ১২ ]

করেন, জাতীয় ভাষা আমাদিগকে প্রকৃত মনুষ্যত্বের পথে লইয়া যায়। মাতার অসম্মান ও জাতীয় ভাষার অসম্মান, উভয়ই তুল্য। উভয়ই অবজ্ঞাত ও উপেক্ষিত হইলে, জাতীয় - গৌরববৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে না। এজন্য, পিতৃভাষা সংস্কৃতের সহিত মাতৃভাষা বাঙ্গালার আলোচনা করা কর্ত্তব্য।

 যে শিক্ষায় স্বজাতিপ্রেমের বিকাশ ও স্বজাতিপ্রিয়তার গৌরববৃদ্ধি না হয়, সে শিক্ষায় জাতীয় ভাব পরিপুষ্ট হয় না। এখন কোমলমতি বালকেরা ইঙ্গরেজী পড়িতে বসিয়া, কেবল বিদেশীভাবেরই দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করে। ডুবাল বা রস্কো তাঁহাদের অধ্যবসায় বা সহিষ্ণুতাশিক্ষার প্রথম পথপ্রদর্শক হয়েন, ওয়েলিংটন বা ওয়াসিংটন তাঁহাদের সমক্ষে বীরত্বজ্ঞানবিকাশ করেন, লুথর বা জেবিয়ার তাহাদিগকে ধার্ম্মিক হইতে শিক্ষা দেন। রঘুনাথ বা জগন্নাথ যে, তাহাদের অধ্যবসায় ও সহিষ্ণুতাশিক্ষার আদর্শ; প্রতাপসিংহ বা প্রতাপাদিত্য যে, তাহাদের বীরপুরুষ; বুদ্ধ বা চৈতন্য যে, তাহাদের ধর্ম্মপ্রচারক, তাহা তাহাদিগকে বুঝাইয়া দেওয়া হয় না। পূজনীয় আর্য্য পিতৃপুরুষের অবদানপরম্পরার আলোচনা করিলে যে, দেশভক্তি, স্বজাতিপ্রীতি এবং আত্মাদর ও আত্মসম্মানের আবির্ভাব হয়, শিক্ষার্থীরা, বাল্যকাল হইতেই তাহাতে বঞ্চিত থাকে। এইরূপ উদাসীন শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে, তাহাদের মানসিক ভাবও ঔদাসীন্যে পূর্ণ হয়। চীন যে অদ্যাবধি চীনই আছে, ইউরোপ বা আমেরিকায় পরিবর্ত্তিত হয় নাই, জাতীয় ভাবের শিক্ষাই তাহার প্রধান কারণ। চীন আধুনিক সভ্যসমাজে অবজ্ঞাত হইতে পারে, কিন্তু এক সময়ে চীনের পরিব্রাজক, চীনের ধর্ম্মপ্রচারক ও চীনের শিল্পকারক যে শিক্ষার পথ উন্মুক্ত করিয়াছিলেন, অদ্যাপি চীন সেই পথে অটল রহিয়াছে। জাতীয়ভাবমূলক শিক্ষা না হইলে, চীন এরূপ অটলতার পরিচয় দিতে পারিত না।