পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা : বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর R 8) বহু দূরে বা ভিন্ন মুখে, তাহা মনে করিবার কারণ নাই। 受 বলেন্দ্রনাথের এই সাযম যে প্রচুর পারমাণে ছিল, তাহা তাহার ভাষাতেও যেমন বুঝা যায়, তাহার ভাবগ্রাহিতাতেও তেমনই বুঝা যায়। তিনি ভাবের রাজ্যে বিচরণ করতেন ও ভাবের বায়ুভরে উড়িয়া বেড়াইতেন ; অথচ আপনাকে একান্ত পরবশ করিয়া, মেরুদণ্ডহীনের মত ভাবের স্রোতে আপনাকে ভাসাইয়৷ দিয়া, আপনাকে শোচনীয় ও কৃপাপাত্র করিয়া তুলেন নাই। এ বিষয়ে তিনি আধুনিক বাঙ্গালায় বহু সাহিত্যসেবীর ও বহুতর সাহিত্য-জীবীর অনুকরণীয় আদর্শস্থল বা শিক্ষাস্থল । 輸 বাঙ্গালা দেশের আধুনিক সাহিত্যের দূষিত হাওয়ায় থাকিয়াও তিনি অস্বাভাবিক ভাবপ্রবণতার সংক্রামক ব্যাধি হইতে আপনাকে মুক্ত রাখিয়াছিলেন ; ইহাতে র্তাহীর সংযম ও নিষ্ঠ হইতে উৎপন্ন স্বাস্থ্যের ও বলবত্তার প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে । আপনার উপর তাহার প্রভুত্ব ছিল ; ভাবের বিকারে তিনি আত্মহারা হইয়া যান নাই । বয়সের সহিত র্তাহার রচনা যেমন গাঢ়তা পাইতেছিল, তেমনই র্তাহার অস্তদৃষ্টির ক্ষমতা বিকাশ পাইতেছিল। বয়সে বালকত্ব অতিক্রম করিবার পূর্বেই তিনি প্রৌঢ়ের দুলভ অন্তদৃষ্টি লাভ করিয়াছিলেন, তাহার শেষ দিকের রচনা হইতে তাহার পরিচয় পাওয়া যায়। বালকের চাঞ্চল্য বালকের রচনাতেও অধিক ছিল না ; কিন্তু বিদেশী শিক্ষার মোহ হইতেও এই অল্পশিক্ষিত বালক অনেক অতিশিক্ষিত বৃদ্ধ অপেক্ষা মূক্ত ছিলেন । ‘সাধনা' পত্রে প্রকাশিত ‘বারাণসী,’ ‘কণারক, ‘থগুগিরি,’ ও ‘প্রাচীন উড়ন্থা’ প্রভৃতি প্রবন্ধে স্বদেশী সৌন্দর্য্যে অনুরাগ ও প্রতি আমাকে বলেন্দ্রনাথের যে পরিণতি দেখিবার জন্য প্রস্তুত করিয়াছিল, অনতিবিলম্বে প্রকাশিত ‘প্রাচ্য প্রসাধনকলা ’ ও ‘নিমন্ত্রণ সভা’ সেই পরিণতির দ্রতত্বে যে আমাকে চমকাইয় দেয় নাই, তাহ বলিতে পারিব না। এই শেষোক্ত প্রবন্ধটির মধ্যে আমাদের বাঙ্গালী হিন্দু গৃহস্থের অন্তঃপুরের “শ্ৰীহস্ত” ও “শুভদৃষ্টি,” গৃহিণীর “লক্ষ্মীশ্ৰী” ও “কল্যাণীযুক্তি,” আমাদের সামাজিক অনুষ্ঠানের মূলে “শুভ সঙ্কল্প” প্রভৃতি কয়েকটি নূতন কথা পাইলাম, যাহা ইতঃপূৰ্ব্বে আর কোন শিক্ষিত স্বদেশীর মুখে এমন ভাবে শুনি নাই। জোড়ার্সাকোর যে বৃহৎ অট্টালিকার দিকে নব্যতন্ত্রের বাঙ্গালী সমাজ এত দিন ধরিয়া সময়োiচত নূতন ভাবের ও নূতন তন্ত্রের, এমন কি, নৃতন ফ্যাশনের জন্য উন্মুখ হইয়া চাহিয়াiছল,—মনের কথা গোপন নাই বা করিলাম—সেখান হইতে যে এমন কথাগুলি বাহির হইবে, তাহার জন্য ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না। বৃদ্ধ ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের গুরুগম্ভীর উপদেশে নব্য বঙ্গ কৰ্ণপাত করা উচিত মনে করে নাই ; মনীষী রবীন্দ্রনাথ যে মঙ্গলশঙ্খ মুহুমুহুঃ ধ্বনিত করিয়া পথভ্রান্ত সকলকে আপন ঘরের লক্ষ্মীমন্দিরের কল্যাণপীঠের অভিমুখে প্রত্যাবর্তনের জন্য আহবান করিতেছেন, অধিক দিনের কথা নহে, সে শঙ্খঘোষণ্ড তখন শুনা যায় নাই। কাজেই বাঙ্গালীর অন্তঃপুরে, বাঙ্গালীর গৃহস্থালীতে, সামাজিক প্রথায় ও দৈনন্দিন ক্রিয়াকর্থে যাহা সত্য আছে, যাহা সুন্দর অাছে, যাহ। শিব আছে, তাহ সহসা সম্মুখে আনিয়া বলেন্দ্রনাথ অন্ধকে দৃষ্টিদানের ব্যবস্থা করিয়া গিয়াছেন। واند -- :