পাতা:প্রবাসী (ঊনত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহিলা-সংবাদ গত ২২শে অগ্রহায়ণ প্রবর্তক-সম্পাদক শ্ৰীযুক্ত মতিলাল রায়ের সহধৰ্ম্মিণী ও প্রবর্তক নারীমন্দিরের প্রতিষ্ঠাত্রী রাধারাণী দেবী পরলোকে প্রয়াণ করিয়াছেন । ১২৯৬ সালের ৬ই আষাঢ় চুচুড়ায় রাধারাণী দেবীর জন্ম হয় এবং নয় বৎসর বয়সে চন্দননগরের ৮বিহারীলাল রায়ের পঞ্চদশবর্ষীয় পুত্র মতিলালের সহিত র্তাহার বিবাহ হয়। বিবাহের পূৰ্ব্বে দুই বৎসর তিনি স্থানীয় বুলিক-বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন । এই স্বল্পকালস্থায়ী পাঠ্যাবস্থার মধ্যে অনেক পুরস্কার পাইয়া রাধারাণী নিজের পাঠাকুরাগ ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। বিবাহের পর সাংসারিক সুখ বলিতে যাহা বুঝায় রাধরাণ বেশীদিন ভাং। ভোগ করেন নাই। একমাত্র কন্যার মৃত্যুর পর তাহার স্বামী তরুণ ধৌবনেই ব্রহ্মচৰ্য্য ব্রত গ্রহণ করেন । রাধারাণী দেবীও সকল বিলাসবাসনা ও ভোগাকাঙ্গণ বিসজ্জন দিয়; স্বামীর ব্রত গ্রহণ করিয়া প্রক্লভ সঙ্গধৰ্ম্মিণার কাজ করেন। তখন হইতে আমরণ তিনি তপস্বিনীর জীবনধাপন করিয়া গিয়াছেন। স্বদেশীর যুগে শ্ৰীযুক্ত অরবিন ঘোষ যখন কলিকাতা &ক্টতে নিরুদ্দেশ হইয়া ফরাসী-শাসিত চন্দননগরে গিয়া আশ্রয় গ্রহণ করেন, তখন তিনি শীঘুক্ত মতিলাল রায় এবং উহার পত্নীর আতিথ্য গ্রহণ করেন । অরবিন্দ ওখন রাধারাণী দেবীর মহিয়সী মুভি দেখিয়া তাহাকে “দিব্যমাতা” বলিয়া সম্বোধন করিয়াছিলেন। ইহার পর জ্যোতিষচন্দ্র, অমরেন্দ্রনাথ, অতুলচন্দ্র, নলিনীমোহন, বিপিনচন্দ্র প্রমুখ অনেক জাতীয় কৰ্ম্মী শাসকদের কোপ হইতে রাধারাণী দেবীর নিকটে গিয়াই শান্তিলাভ করিয়াছেন । রাধারাণী দেবী “প্রবর্তক-সক্তেঘর” কৰ্ম্মীদিগের মাতুস্বরূপা ছিলেন । বালিক। বয়সে তিনি নিজগ্রামের এক মুদীর দোকানে প্রায়ই খেলা করিতে যাইতেন। সেখানে তাহার একটি কাজ ছিল মাটিতে ছড়ান সরিষার কণাগুলি সংগ্ৰহ করা। দোকানী তাহার এই কাজ দেপিয়া একদিন তাহাকে বলিল, “তুই এই সরিষাগুলির মত অনেক ছেলেমেয়ের মা হবি।” শেষবয়সে রাধারাণী এই কথা স্মরণ করিয়া হাসিতে হাসিতে প্রায়ই বলিতেন, "কি আশ্চৰ্য্য ! আমার সেই মুদীকাকার আশীৰ্ব্বাদটুকুই থাটি হয়ে জীবনে ফলে গিয়েছে।” প্রবর্তক-নারীমন্দির-প্রতিষ্ঠা রাধারাণা দেবীর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ। তিনি বিশুদ্ধ ভারতীয় ভাবের সাধিক ছিলেন । এই অবগুণ্ঠনবতী, নগ্নপদচারিণী, ভারতীয়া সাধী জীবনে যে মন্ত্র পালন করিয়া গিয়াছেন তাহার প্রথম ও শেষ কথা “ভগবানে আত্মসমপণ ।” তিনি তাহার প্রতিষ্ঠিত নারীমন্দিরে এই আদর্শেরই প্রতিষ্ঠা করিয়া গিয়াছেন। প্রবক্তক নারীমন্দিরের বালিক। কিশোরী বিবাহিতা ও অবিবাহিতা যুবতীরাও এই আদর্শেরই অনুসরণ করে । জাহাদেরও মন্ত্র "ভাগবত জীবনলাভ ও ভাল্পতঙ্গাভির মধ্যে প্রেম ও প্রতিষ্ঠা ।” ঐক্যের এই উ৮ আদশ সিদ্ধ করার تنتن تذ পরলোঞ্চগঙ্গা এাধারণ দেবী জন্য নারীগণ একত্র, এক পরিবারভুক্ত হইয়া বাস করে, কেহ স্বতন্ত্র অর্থ-সম্পদ রাখে না, বিলাসব্যসন বজ্জন করে । তাহারা জীবনের সকল শক্তি ও অবদানই ভাগবত কাৰ্য্য সাধন করিবার জন্য সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করিয়াছে । শিক্ষার সঙ্গে শ্রমকে উপেক্ষা করে না ; গীত পুরাণ, দৰ্শন ও ব্যাকরণচর্চার সঙ্গে সঙ্গে চরকায় স্বত্ত কাটে, কুন্ধনশালায় অল্প রাধিয়া শত ভ্রাতাভগ্নীর পাতে পরিবেশন করিয়া স্নেহ ও তুপ্তির সহিত খাওয়ায়, ঢেকিতে পাড় দেওয়া, মুড়িভাঙ্গা, দ্বন্ধ দোহন করা প্রভৃতি কোন গৃহ-শিল্প ও শ্রমসাধ্য কৰ্ম্মৰেই তুচ্ছ জ্ঞান করে না।