পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র "לכ9א প্রধান লক্ষণ বলিয়া বিবেচিত হয়, কালিদাস মহিষের মধ্যে মানুষ। জগৎকে যদি সুন্দর দেখিতে চাও, তাহার নিকট যাও। আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হইবে। তত্ত্বকথার অন্বেষণে যাইবার প্রয়োজন নাই । কবি শব্দের বিবিধ সংজ্ঞা এ পর্য্যন্ত প্রদত্ত হইয়াছে ; তন্মধ্যে কোনটি যে গ্রহণীয়, ভাই ঠিক বলিতে পারি না। কেহ বলেন—স্বভাবকে যিনি স্বন্দর করিয়া তুলেন, নের করিয়া দেখান, তিনি কবি। কালিদাস এই সংজ্ঞানুসারে মহাকবি। কিন্তু অপরবিধ সংজ্ঞাও বৰ্ত্তমান আছে। কাহারও মতে যিনি জগতের একখানা যথাযথ স্বাভাবিক চিত্ৰপট আঁকিয়া দিতে পারেন, তিনিই যথার্থ কবি। অর্থাৎ জগতে স্বন্দর ও কুৎসিত, কোমল ও কঠোর, দুইটা ভাগ স্বভাবতঃই বর্তমান আছে ; তখন সেই দুইটাকে পাশাপাশি আনিয়া কোনটারই উপর নিজে হইতে রঙ না ফলাইয়া, তাহাদের যথার্থ আপেক্ষিক পরিমাণের ইতরবিশেষ না করিয়া, আমাদের চক্ষুর সম্মুখে ধরিয়া দেওয়াই প্রকৃত কবির কাজ। আজকাল কাব্য সমালোচনায় এই স্বাভাবিকতার, ইংরাজীতে যাহাকে realism বলে, ইহারই কতকটা প্রাধান্য দেখা যায়। র্যাহারা realistic কাব্যের প্রিয়, তাহারা অতিরঞ্জিত বর্ণনা ভালবাসেন না ; কবির কল্পনা ও সৃষ্টি দ্বারা প্রবঞ্চিত হইতে চাহেন না। সংসারটা যেমন ভালয় মন্দয় চলিতেছে, সেইরূপ উহাকে ভালয় মন্দয় চিত্রিত দেখিতে র্তাহারা প্রয়াসী। উপরে জগতের স্বাভাবিক সৌন্দৰ্য্য সম্বন্ধে যে মত প্রকাশ করা গিয়াছে, তাহাতে যদি কিছু সত্য থাকে, তাহা হইলে এই শেষোক্ত মতটার কোনরূপ ভিত্তি পাওয়া দুষ্কর হইয় উঠে। যখন জগৎকে সকলে আপন মনের দ্বার। নিৰ্ম্মাণ করিয়া দেখে ; বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট জগতের রূপ বিভিন্ন ; তখন জগতের স্বাভাবিক মূৰ্ত্তি কিরূপ, তাহ ঠাহর পাই না। যখন মনুষ্য মাত্রেই আপন আপন জগৎকে আপনি কল্পিত ও স্বল্প করিয়া লইয়াছে, তখন এমন একটা মহন্তের কল্পনানিরপেক্ষ জগৎ কোথায় আছে যে, তাহার মূৰ্ত্তিটা আসল রঙে চিত্রিত করিয়া সাধারণের দর্শনার্থে উপস্থিত করিতে হইবে ? সুতরাং কবিকে আপনার কল্পনার আশ্রয় লইতেই হইবে । অর্থাৎ তিনি তাহার জগৎকে যেমন নিজে দেখেন, তেমনই ভাবে আঁকিয়া অপরের সম্মুখে স্থাপিত করিতে হইবে। আমাদের তাহাতে লাভ এই যে, আমরা আমাদের জগতে যেটুকু আপন চেষ্টায় দেখিতে পাইতেছিলাম না, তিনি তাহা দেখাইয়া দেন ; আমরা যে ভাবে দেখিতেছিলাম, তিনি তাহা হইতে নিবৃত্ত করিয়া অন্য ভাবে ও নিজের মত করিয়া দেখান। অর্থাৎ কবি অনেক স্থলে আমাদের চক্ষু ফুটাইয়া দেন ; কুত্রাপি আমাদের চোখের উপর যদি কোন ময়লার আবরণ জমিয়া থাকে, তাহা মুছাইয়া দেন, কুত্ৰাপি বা চোখের উপর একখানা চশমা বা দূরবীন এইরূপ একটা কিছু যন্ত্র ধরিয়া দেন। এই হিসাবে কবি একরকম ডাক্তার। মানুষের মধ্যে অনেকে রঙকানা আছে, শুনা যায় ; কিন্তু এই ব্যাধির চিকিৎসা এ পর্য্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নাই। কিন্তু কবি এই ব্যাধির প্রকৃত চিকিৎসক। যাহার রঙ দেখিবার কোন সম্ভাবনা ছিল না, তিনি তাহাকে রঙ দেখিবার সামর্থ্য দিয়া দমন্ত্রগ্রহীত করেন। "ান,কৰি মাত্রেরই কল্পনা ষে জগৎকে একই বর্ণেরঞ্জিত করিবে, এমন কি কথা ।