পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : ব্রাহ্মণ কি গ্ৰীষ্ট, ? 9& S এই শক্তি চালনা করেন। সমাজ হয়ত স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া স্বেচ্ছাক্রমে তাহাকে এই অধ্যক্ষতা প্রদান করিয়াছে। কিন্তু এখন আর সমাজের অর্থাৎ সজোর কোন ব্যক্তির ধৰ্ম্মবিষয়ে স্বাতন্ত্র্য নাই। রাজার নিয়োগে নির্দিষ্ট যাজকের সমাজের পক্ষ হইতে সাধারণের কল্যাণজন্য ঈশ্বরের উপাসনা করে ও আবার ব্যক্তিগত কল্যাণের জন্য বিবিধ অনুষ্ঠানে সেই রাজনিযুক্ত সমাজসম্মত সমাজের প্রতিনিধিস্থানীয় পুরোহিতকেই আহবান করিতে হয়। রাজনিযুক্ত পুরোহিতেরা রাজ্যের মঙ্গলার্থ ঈশ্বরকে প্রার্থনা করেন, দেশে দৈবোংপাত উপস্থিত হইলে ঈশ্বরের প্রসাদনের জন্য দেশের হইয়। স্তবস্তুতি করেন ; যুদ্ধবিগ্রহের সময় শক্রনিপাতের জন্য ঈশ্বরের সাহায্য প্রার্থনা করেন। আবার ব্যক্তিবিশেষের জাতকৰ্ম্মে, নামকরণে, বিবাহে, অস্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সেই রাজনিযুক্ত সমাজসম্মত প্রতিনিধিকে ডাকিতে হয়। যেহেতু তিনিই খ্রষ্টের মিনিষ্টার, অপরের সে অধিকার নাই। ফলে খ্ৰীষ্টান সমাজে পুরোহিত মুখ্যতঃ সমাজেরও প্রতিনিধি, এবং গৌণতঃ ব্যক্তিবর্গের প্রতিনিধি। আগে তিনি সমাজের প্রতিনিধি, পরে তিনি ব্যক্তিবিশেষের প্রতিনিধি ; কেন না, সমাজ ছাড়িয়া ব্যক্তির ধৰ্ম্মবিষয়ক স্বাতন্ত্র্য নাই। প্রত্যেক খ্ৰীষ্টান খ্ৰীষ্টীয় সঙ্গের অঙ্গ মাত্র। ইংরেজ সমাজ ভাঙ্গিয়া যে সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নন কনফর্মিষ্ট সমাজ উৎপন্ন হইয়াছে, যাহার। রাজার অধ্যক্ষত স্বীকার করে না এবং রাজনিযুক্ত পুরোহিতের শাসন মানে না, তাহাদের মধ্যে ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য অনেকটা আছে বটে, কিন্তু তথাপি তাহারাও আপন আপন ক্ষুদ্র চার্চ বা উপসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করিয়া আপনাকে সেই সেই উপসঙ্ঘের অঙ্গস্বরূপে নির্দেশ করিতে যেন ব্যাকুল। খ্ৰীষ্টীয় ধৰ্ম্মের শাসনপ্রণালীর যেন মূল ভিত্তিই এই, সঙ্ঘ হইতে স্বতন্ত্র ব্যক্তির অস্তিত্ব নাই। কাজেই যিনি সঙ্ঘেরও পুরোহিত, তিনিই ব্যক্তিরও পুরোহিত । তিনি সাধারণের হইয়া উপাসনা করেন, আবার তিনি ব্যক্তির হইয়া উপাস্তের প্রসাদন করেন। তিনিই খ্ৰীষ্টের নিরূপিত মিনিষ্টার । ইউকেরিষ্ট-ঘটিত অনুষ্ঠানে খ্ৰীষ্টীয় সমাজের এই মৌলিক ভাবটা স্পষ্ট দেখা যায়। পুরোহিত মদ ও রুটি যথাবিধানে উৎসর্গ করিয়া দেন। এই উৎসর্গের পর সেই মদ ও রুটি যীশু খ্ৰীষ্টের রক্তমাংসে পরিণত হয়। তৎপরে সমবেত উপাসকগণ সেই রক্তমাংস বঁাটিয়া লন । এই অনুষ্ঠান খ্রষ্টের সহিত সজ্যের সম্মিলন ও একাত্মতা ব্যঞ্জন করে । খ্ৰীষ্টান সঙ্ঘ খ্ৰীষ্টের দেহ হইতে অভিন্ন। খ্ৰীষ্টের রক্ত ও ঐঃের মাংস সঙ্ঘের অস্থিমজ্জায় মিলিত আছে। খ্ৰীষ্ট ছাড়া সজ্য নাই, সঙ্ঘ ছাড়া খ্ৰীষ্ট নাই । এই পানভোজন অনুষ্ঠানের দ্বারা মাঝে মাঝে সেই একাত্মতা স্মরণ করাইয়া দিতে হয়। অথবা এই অনুষ্ঠানের দ্বারাই উভয়ের সম্মিলন সাধিত হয়, উভয়ের একাত্মতা সাধিত হয়। এই অনুষ্ঠান খ্ৰীষ্টীয় সমাজের সর্বপ্রধান অনুষ্ঠান, ইহার নিগৃঢ় অর্থ ও তাৎপৰ্য্য লইয়া সাম্প্রদায়িক বিবাদ বিসম্বাদ রক্তপাত যথেষ্ট হইয়াছে, ইতিহাসে তাহা লিপিবদ্ধ আছে। খ্ৰীষ্টানগণের কল্পনা এই অনুষ্ঠানে বিবিধ নিগুঢ় তাৎপর্য্য অর্পণ করিয়া ইহাকে পরম গৌরবে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। আমাদের দেশে বৌদ্ধগণ বুদ্ধের সহিত সঙ্ঘের কতকটা এইরূপ একাত্মতা স্বীকার করিতেন, খ্ৰীষ্টীয় অম্বষ্ঠানের অনুরূপ কোন অনুষ্ঠান বৌদ্ধগণের মধ্যে প্রচলিত ছিল কি না জানি না। ইহুদীদের মধ্যে এরূপ অনুষ্ঠান কিছু ছিল কি ? হয়ত খ্ৰীষ্টানের