পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●●S9 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র কোন প্রভুশক্তি হইতে নিযুক্ত হয় না। যে আমার পুরোহিত, সে অন্যের পুরোহিত নহে । অন্য দেশে যেমন clergy ও lay দুই সম্প্রদায় সমাজে বর্তমান, আমাদেব দেশে সেরূপ দুই সম্প্রদায় নাই। ব্রাহ্মণ মাত্রেই layman ; clergyman নহে। আবার এ দেশে যে কোন ব্রাহ্মণ যে-কোন ব্যক্তিকে যখন ইচ্ছা যজমানস্বরূপে গ্রহণ করিতে পারেন, আবার যে-কোন যজমান যে-কোন ব্রাহ্মণকে যখন ইচ্ছা পুরোহিতস্বরূপ গ্রহণ করিতে পারেন । কোন বাধ্যবাধকতা নাই ; কোন স্বাধীনতার সঙ্কোচ নাই। খ্ৰীষ্টানদের দেশে পুরোহিতের সমাজপ্রতিনিধিত্ব আছে, এ দেশের পুরোহিত কোন সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন না। তিনি কেবল আপনার যজমানেরই প্রতিনিধি, সেই যজমান এক ব্যক্তি হইতে পারে, এক গৃহস্থ পরিবার হইতে পারে ; কিম্বা বহু পরিবার হইতে পারে। গ্রাম্য দেবতার পূজক ব্রাহ্মণের গ্রামের পক্ষ হইতে পূজা করেন। সেখানে সমাজও ক্ষুদ্র, প্রতিনিধিত্বও সঙ্কীর্ণ ও সীমাবদ্ধ। খ্ৰীষ্টানদের দেশে গৃহস্থ মাত্রই এই সকল পুরোহিতের মধ্যস্থত দ্বারা উপাস্তের সম্মুখীন হয়েন। দেবতার নিকট র্তাহাদের পূজা পৌছাইয়া দিবার এইরূপ মধ্যস্থের একান্ত প্রয়োজন। আমাদের দেশে যে-কোন ব্যক্তি ব্রাহ্মণ শূদ্র নির্বিবশেষে পুরোহিতের সাহায্য ব্যতিরেকেও স্বধৰ্ম্মপালন করিয়া চিরজীবন কাটাইতে পারেন। নৈমিত্তিক কাম্য কৰ্ম্ম অনুষ্ঠানে ইচ্ছা করিলে ব্রাহ্মণ আহবানের কার্য্যতঃ প্রয়োজন হয় বটে, কিন্তু অকরণে কোন প্রত্যবায় নাই। অন্যত্র পাপপুণ্য বণ্টন পোপের হন্তে । পোপ যাহাকে পাপী বলিয়া নির্দেশ করিবেন, কেহ তাহাকে মুক্তি দিতে পারে না ; পোপ যাহাকে পুণ্যের ছাড দিবেন বৈতরণীপারে কেহ আর তাহাকে আটকাইবে না। এ দেশে কোন ব্রাহ্মণের, কোন পুরোহিতের সাধ্য নাই যে, আমাকে এইরূপ ছাড দিতে সাহস করেন। কোন পোপ আমার ধৰ্ম্মজীবনের নিয়ন্ত নহেন। মনুষ্য মাত্রই সম্পূর্ণ স্বাধীন ব্যক্তি এবং স্বকৰ্ম্মের ফলভাগী। কৰ্ম্মফল হইতে কেহ তাহাকে বঞ্চিত করিতে পারে না । একটা কথা লইয়া তর্ক উঠতে পারে । খ্ৰীষ্টানদের salvation নামে উদ্ধারের উপায় আছে। এই salvation এর তর্জমায় অনেকে মুক্তি শব্দ ব্যবহার করেন। কিন্তু তাহা ঠিক নহে। Salvation অর্থে পাপ হইতে মুক্তিলাভ মাত্র ; তাহার ফল স্বৰ্গলাভ । যে ব্যক্তি যীশু খ্ৰীষ্টকে শরণ লইয়াছে, যথাবিধানে শরণ লইয়াছে, সে-ই এই স্বৰ্গপ্রাপ্তির অধিকারী । খ্ৰীষ্টান ভিন্ন অন্য বিধৰ্ম্মীর salvationত একেবারেই অসম্ভব। হিন্দু শাস্ত্রে মুক্তি শব্দের অর্থ অন্যরূপ । মুক্তির নানা অর্থ হিন্দু শাস্ত্রেও চলিত আছে সত্য ; কিন্তু এখানে কোন অবিচার নাই । প্রথম দার্শনিকগণের মুক্তি। এই মুক্তির অর্থ স্বর্গপ্রাপ্তি বা পাপমোচন মাত্র নহে। মুক্তিতে পাপপুণ্য কিছুষ্ট থাকে না ; স্বর্গে বাস বা বৈকুণ্ঠে বাস মুক্তি নহে, উহা বন্ধনের নামান্তর, এই মুক্তির উপায় জ্ঞানলাভ। যিনি জ্ঞানলাভ করিয়াছেন, তিনিই মুক্ত । সেই জ্ঞান কিরূপ, তাহা লইয়া বিবিধ দর্শনে মতভেদ আছে ; কিন্তু এ কথা কোথাও নাই যে, ব্রাহ্মণেই মুক্তির অধিকারী, অষ্ঠে নহে। ব্রাহ্মণ হইলেই জ্ঞানী হয় না ; শূত্র হুইলেই অজ্ঞানী হয় না। তবে জ্ঞানলাভ সহজ কথা নহে। অনেক তপস্যা, অনেক চেষ্টার ফলে জ্ঞানলাভ হয় । সেই পথ কাহারও পক্ষে স্বগম নহে। ভক্তেরা ও পৌরাণিকের মুক্তি শব্দ অন্ত অর্থে ব্যৱহার করেন। লামীপ্য, با ۱