পাতা:প্রবাসী (ঊনত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] বিজ্ঞান ও শিক্ষা ԳՆ(t ব্যক্তির যখন চরিত্রগত অন্ত কোনরূপ দোষ বা নূ্যনতা দৃষ্ট হয়, লোকে আশ্চৰ্য্য হয়, বলে, “লোকটা লেখাপড় শিখেও মানুষ হ’ল না।” ‘লেখাপড়া শেখার ক্ষমতার উপর এই যে প্রগাঢ় বিশ্বাস, ইহা শুধু অহেতুক নহে, অতিশয় অতিরঞ্জিত এবং একেবারে অবৈজ্ঞানিক। এই ভিত্তির উপর স্থাপিত বলিয়াই আধুনিক শিক্ষা অসম্পূর্ণ এবং সময়ের অনুপযোগী। সংস্কার যে বিশেষ প্রয়োজন তাহা সকলেই অনুভব করি, কিন্তু কোথা হইতে আরম্ভ করিয়া কি ভাবে করিতে হইবে, তাহা আমরা বুঝিতে পারি না । স্থানে স্থানে সংস্কার করিলে জীর্ণ ইমারত কিছুদিন হয়ত দাড়াইতে পারে, কিন্তু তাহার অচিরাং পতন অবখ্যম্ভাবী—যদি তাহার ভিত্তি যথোচিতভাবে স্থাপিত না হইয়া থাকে । এইগনে বিজ্ঞানের সহিত শিক্ষার প্রথম সংস্পশ আমরা দেখিতে পাই। বিজ্ঞান আমাদের ভিত্তির দুৰ্ব্বল অংশের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া দিয়াছে। আধুনিক মনোবিজ্ঞান আমাদের দেখাইয়া দিয়াছে যে, বুদ্ধিই মানবজীবনের সার নহে ; জীবন সংগ্রামে বুদ্ধি যত প্রয়োজনীয়, কৰ্ম্ম প্রবণতা, ভাব-প্রবণতাও ঠিক সেইরূপ প্রয়োজনীয়। এইটি আমাদের এখন বিশেষভাবে মনে রাখা উচিত। যে-কোন শিক্ষা-সংস্কারের পরিকল্পনায় শেষোক্ত দুটির স্থান নাই, তাহা কখনই ফলবতী হইবে না। শিক্ষার আদশ বড় করিয়া দেখিলেই শিক্ষার উন্নতি করা যায় না। আদশ দরকার, কিন্তু বাস্তব হইতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন আদশ কল্পনা করা কবিদ্বের পরিচায়ক হইলেও কাৰ্য্যকারিতার পক্ষে সুবিধাজনক নহে । শিক্ষণক্ষেত্রের এই বাস্তবতার বিষয়ে বিজ্ঞান আমাদের পদে পদে সাহায্য করিতেছে। ডারউইনএর ক্রম-বিকাশতত্ত্ব শিশুমন-অধ্যয়নের গুরুত্বের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করিয়াছে। শিশু ভূমিষ্ঠ হইবামাত্র তাহার শিক্ষা আরম্ভ হয় ; স্বতরাং শুধু স্কুল, কলেজ সংস্কার করিলে গোড়া কাটিয়া আগায় জল দেওয়ার মতই হয়। বিজ্ঞান আরও বলিতেছে, প্রথম পাচ-ছয় বৎসরের মধ্যেই শিশুচরিত্রের মূল ভিত্তি স্থাপিত হইয়া যায়। স্বতরাং, এই সময়ই সৰ্ব্বাপেক্ষা সাবধান হওয়া উচিত। তাই শিক্ষক অপেক্ষা পিতামাতার দায়িত্ব যে কত গুরুতর তাহা ভাল করিয়া উপলব্ধি করা একান্ত প্রয়োজন হইয়া পড়িয়াছে। শিক্ষ-সম্বন্ধে এই বৈজ্ঞানিক তথ্য আমরা জানিয়াছি যে, শিশুমাত্রেই কতকগুলি প্রবৃত্তি লইয়া জন্মগ্রহণ করে, সেইগুলি এবং পারিপাখিক অবস্থা, এই দুইটিই শিক্ষার উপকরণ। কিন্তু এই দুইটি সম্বন্ধেই আমাদের উদাসীনতার অভাব নাই। এইখানে শিক্ষাবিজ্ঞানের গবেষণার প্রশগু ক্ষেত্ৰ পড়িয়া রহিয়াছে। পাশ্চাত্য দেশে প্রতি বৎসর কত সহস্র শিশুর দৈহিক ও মানসিক ক্রমবিকাশের প্রত্যেক ঘটনা লিপিবদ্ধ হইতেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এরূপ করিবার কল্পনাও যে অধিকাংশ লোকের মনে উদয় হয় না, তাহ বলিলে বোধ হয় অড়্যক্তি হইবে না। আধুনিক যুবকদের মানারূপ দোষ দেখাইয়া আমরা বিজ্ঞতার পরিচয় দিই ; কিন্তু যে আবহাওয়ায় তাহারা বদ্ধিত ইষ্টয়াছে তাহা পরিবর্তনের কোন চেষ্টা করার কথা মনে করি না । Healthy mind in a healthy body of SR সকলেই জানেন, কিন্তু শরীরের সহিত মনের সংযোগ যে কত ঘনিষ্ঠ,তাহা Physiologyর প্রতি নূতন আবিষ্কারেই দেখিতে পাইতেছি । সামান্ত অস্ত্রোপচারের ফলে, অে আপাতজড়বুদ্ধি শিশুর বুদ্ধি স্বাভাবিক শিশুর ছায়ই স্ফৰ্ত্তিলাভ করিতেছে। মূক, বধির, অন্ধ প্রভৃতিদের শিক্ষিত করিবার প্রণালী দেখাইয়া দিয়া বিজ্ঞান যে সমাজের প্রভূত উপকার সাধন করিয়াছে তfহ'কেঅস্বীকার করিবে ? শিশুবিজ্ঞানের এইরূপ নানা তত্ত্ব নিত্যই আবিষ্কৃত হইতেছে। এই সূতন জ্ঞানের বহুল প্রচার একান্ত আবশ্যক। বহুল প্রচার যে হয় না, তাহার কারণ wraito cott Education foss; so Training Collegeএর সঙ্কীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাহার স্থান নাই । মনোবিদ্যা-বিভাগে ইহার তত্ত্বগত চর্চা কিছু হইয়া থাকে, কিন্তু ব্যাবহারিক দিকে তাহা কাৰ্য্যকরী করিবার কোনরূপ স্ববিধা নাই । আশা হয়, দেশবাসীর দৃষ্টি শীঘ্রই এইদিকে পড়িলে-- তাহার লক্ষণ চারিদিকে দেখা যাইতেছে। করপোরেশান