পাতা:বঙ্গসাহিত্যে নারী.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বঙ্গসাহিত্যে নারী
২৩

যান নাই। ইনিও অন্যতর সম্পাদিকারূপে তিন বৎসর ‘ভারতী’ পরিচালনা করিয়া গিয়াছেন। ১৯২৫ সনের ১৩ই জুলাই তাঁহার মৃত্যু হইয়াছে।

 সরলা দেবী। ইনি স্বর্ণকুমারী দেবীর কনিষ্ঠা কন্যা; জন্ম ১৮৭২ সনের ৯ই সেপ্টেম্বর। ১৮৯০ সনে ইনি বেথুন কলেজ হইতে কৃতিত্বের সহিত বি. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯০৫ সনে পঞ্জাবের আর্য সমাজ-নেতা পণ্ডিত রামভজ দত্ত চৌধুরীর সহিত ইঁহার বিবাহ হয়। ১৯২৩ সনের ৬ই আগস্ট রামভজের মত্যু হয়।

 জীবনের দীর্ঘ কাল দেশসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করিলেও সরলা দেবী মাতৃভাষার প্রতি উদাসীন ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে শৈশবাবধি সাহিত্যের প্রতি তাঁহার প্রগাঢ় অনুরাগ ছিল। ১২৯২ সালের জ্যৈষ্ঠ-সংখ্যা ‘বালকে’ তাঁহার লিখিত প্রথম রচনা—‘দুর্ভিক্ষ (বালিকার রচনা)’ প্রকাশিত হয়। ১৮৮৫ সনের নবেম্বর-সংখ্যা ‘সখা’য় তাঁহার পুরস্কারপ্রাপ্ত রচনা ‘পিতামাতার প্রতি কিরূপ ব্যবহার করা কর্ত্তব্য’ স্থানলাভ করে; রচনার শেষে লেখিকার বয়স ‘১২ বংসর ১১ মাস’ দেওয়া আছে। ১২৯৪ সাল হইতে আরম্ভ করিয়া সরলা দেবী ‘ভারতী’তে বহু গদ্য-পদ্য রচনা ও স্বরলিপি প্রকাশ করিয়াছেন; ১৩০০ সালের আশ্বিন-সংখ্যা ‘ভারতী ও বালকে’ তাঁহার কৃত ‘বন্দে মাতরং’ গানের স্বরলিপি স্থান পাইয়াছে। তিনি অনেক কাল ‘ভারতী’ও সম্পাদন করিয়াছেন। একদা তাঁহার রচনা সাহিত্য-সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের প্রশংসাও অর্জন করিয়াছিল। সরলা দেবী তাঁহার স্মৃতিকথায় বলিয়াছেন:

 “‘ভারতী’তে আমার আঠার উনিশ বৎসরের লেখা ‘রতিবিলাপ’ [‘ভারতী ও বালক’, বৈশাখ ১২৯১] ও ‘মালবিকা-অগ্নিমিত্র’ [‘ভারতী ও বালক’, পৌষ, ফাল্গুন, চৈত্র ১২৯৮] পড়ে তাঁর লেখা চিঠি। সে চিঠি সাহিত্য দায়রায় দণ্ডায়মান একজন নবীনের উপর তাঁর রায়—বা তাকে দুই বাহু বাড়িয়ে আদর করে নেওয়া। যদিও রবিমামার চিঠিতে তাঁরও appreciation ব্যক্ত হয়েছিল, কিন্তু তাঁর চেয়েও সেদিন সাহিত্যসম্রাট ও সাহিত্যের ন্যায়াধীশ বঙ্কিমের রায়ে নিজেকে বেশি চরিতার্থ মনে করলুম।..শ্রীশ মজুমদার প্রভৃতি বন্ধুদের কাছে বঙ্কিম আমার লেখাগুলি সম্বন্ধে না কি নিজের সবিস্ময় অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন—তা তাঁদের লিখিত বঙ্কিমের জীবন-প্রসঙ্গে লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু বঙ্কিমের লিপি আর অন্যের লিপিতে অনেক তফাৎ। বঙ্কিমের লিপিখানি ছিল পুরো বঙ্কিমী ঠাটের সাহিত্যের একখানি হীরের কুচি। বিদূষক সম্বন্ধে আমার মন্তব্যের