পাতা:বিশ্বকোষ দশম খণ্ড.djvu/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিৰ্ব্বাণ [ ১৯৩ ] নিৰ্মাণ তয়া বিষয়সংক্লেশয়াগকৃষ্ণ প্রজায়তে। র্তাহীদের আর জন্ম গ্রহণ করিতে হইবে না । তাহারা ভবচক্র কামাদিষু তত্ত্বভূতমুপাদানং প্রবর্ততে। অতিক্রম করিয়া নিৰ্ব্বাণ লাভ করিয়াছেন । * , উপাদানোন্তবঃ কামরূপীরূপময়ে ভবঃ । এখন দেখা গেল, অবিদ্যাদির নিবৃত্তিধারা দুঃখের অত্যন্ত নানাযোনিপরাবৃত্তা জাতির্তবসমুস্তুবা ॥ নিবৃত্তি ও নিৰ্ব্বাণ লাভ হইয়া থাকে। কোন উপায় অবলম্বন জরামরণশোকাদিসত্ত্বতির্জাতিসংশ্রয়া । করিলে অবিদ্যাদির নিরোধসাধন করা যায় ? বৌদ্ধগ্রন্থে অবিদ্যাদিনিরোধেন তেষাং বুপিয়তি-ক্রমঃ ॥" (বুদ্ধচরিত ) বিবিধ প্রকার দুঃখ ও সংসারবিষবৃক্ষের মূল অবিদ্যা । অবিস্ত হইতে কায়িক, বাচিক ও মানসিক সংস্কারসমূহের উৎপত্তি হয়। সংস্কার হইতে বিজ্ঞান, বিজ্ঞান হইতে নামরূপ, নামরূপ হইতে ষড়ায়তন, বড়ায়তন হইতে স্পর্শ, স্পর্শ হইতে বেদন, বেদন হইতে তৃষ্ণ, তৃষ্ণা হইতে উপাদান, উপাদান হইতে ভব, ভব হইতে জাতি ও জাতি হইতে জরা মরণ শোক ইত্যাদির উৎপত্তি হয়। অবিদ্যাদির নিরোধদ্বারা ক্রমে এই সমুদায়ের নিবোধ হয় । অবিদ্যাদি দ্বাদশ পদার্থ প্রতীত্যসমুৎপাদ নামে অভিহিত হইয় থাকে। উদীচ্য বৌদ্ধগণ সংসারের যে চিত্র অঙ্কিত করিয়াছেন, তাহার প্রতিকৃতি একপানি চক্র । এই চক্রের কেন্দ্রস্থলে কপোতরূপী রাগ, সপর্যপী দ্বেষ এবং শুকররূপী মোহ বিদ্যমান আছে । এই রাগ, দ্বেষ ও মোহদ্বারাই সংসারচক্র বিঘূর্ণিত হইতেছে । সংসারচক্রের নেমিদেশে প্রতীত্যসমুৎপাদের দ্বাদশ মূৰ্বি অঙ্কিত রহিয়াছে। প্রথম ঘরে একটী অন্ধ স্ত্রীলোক একটা প্রদীপের সম্মুখে আসীন আছে। দ্বিতীয় ঘরে একজন কুন্তকণর অবিরত একটা চক্র বিঘুর্ণিত করিতেছে । তৃতীয় ঘরে একটা বানর অস্থির ভাবে লম্ফ ঋক্ষ করিতেছে। চতুর্থ ঘরে একখানি নৌকায় একজন আরোহী উপবিষ্ট। পঞ্চম ঘরে একণানি গৃহের প্রতিকৃতি অঙ্কিত অাছে। ষষ্ঠ ঘরে একট পুরুষ ও একটা স্ত্রী একত্র বসিয়া আছে। সপ্তম ঘরে একটা তাঁর একজন সমুষ্যের চক্ষু মধ্যে প্রবেশ করিতেছে । অষ্টম ঘরে একজন মনুষ্য সুরাপান করিতেছে। নবম ঘরে একটী বুদ্ধ বষ্টির উপর ভর দিয়া দণ্ডায়মান আছে। দশম ঘরে আলিঙ্গনবদ্ধ দম্পতী। একাদশ ঘয়ে একটী স্ত্রী সস্তান প্রসব করিতেছে । দ্বাদশ ঘরে একজন মনুষ্য শব স্বন্ধে করিয়া শ্মশানভিমুখে ধাবমান হইতেছে । এই প্রতীত্য-সমুৎপাদচক্রের চতুর্দিকে নবক, তির্যাক্‌, প্রেত, অমুর, মনুষ্য ও দেবলোকের প্রতিকৃতি । এই সকল লোকের মধ্যে মনুষ্যলোকই শ্রেষ্ঠ, যেহেতু বুদ্ধত্ব বা নিৰ্ব্বাণ কেবল মহুষ্যলোকেই সম্ভব হয় । অন্তাষ্ঠ লোকে মুখদুঃখাদির ভোগমাত্র হইয়া থাকে। এই বড় - লোকের চতুর্দিকে বুদ্ধগণের প্রতিমূৰ্ত্তি। তাহার রাগ, দ্বেষ, মোহ ও অবিদ্যাদি অতিক্রম করিয়াছেন, নরকাদি লোকে | Χ 8S বর্ণিত আছে, আৰ্য-অষ্টমার্গের অনুগমনই সেই উপায় । সমাগৃদৃষ্টি, সম্যক্ সংকল্প, সম্যগ্বাক্, সম্যক্ কৰ্ম্মান্ত, সম্যগাজীব, সমাগব্যায়াম, সমাক্-স্মৃতি ও সম্যক-সমাধি এই অষ্টবিধ আর্যামার্গের অনুধাবন দ্বারা অবিদ্যাদি নিরোধের সোপান প্রাপ্ত হওয়া যায় । অবিদ্যাদির চরম ধ্বংস করিতে পারিলেই বুদ্ধত্ব বা নিৰ্ব্বাণ লাভ হয় । উপরি উক্ত বিষয়ের সংক্ষিপ্তভাব নিয়ে লিখিত হইতেছে। প্রথমে প্রাণাতিপাত, অদত্তাদান, কামমিথ্যাচায়, মুষাবাদ, পৈশুন্ত, পারুষ, সম্ভিন্নপ্ৰলাপ, অভিধা, ব্যাপাদ ও মিথ্যাবৃষ্টি এই দশবিধ অকুশল কৰ্ম্মপথ পরিহার করিতে হইবে। মহাবস্তু গ্রন্থে লিখিত আছে— "প্রাণাতিপাতে অধৰ্ম্মে প্রাণাতিপাতধৈরমণেtধৰ্ম্মে, অদিগ্গাদানো অধৰ্ম্মে অদত্তাদানবৈরমণোধৰ্ম্মঃ, কামে্যু মিথ্যাচারে অধৰ্ম্মে কামেষু মিথ্যাচারবৈরমণে ধৰ্ম্মে মুরামেরেয়ুমদ্যপানং অধৰ্ম্মে সুরাটমপ্লেয়মদ্যপানাতে বৈরমণোধৰ্ম্মে, পিশুনা বাচ অধৰ্ম্মে পিশুনা বাচাতে বৈরমণে ধৰ্ম্মে, দশকুশলাকৰ্ম্মপথধিৰ্ম্মে, দশছি মহারাজ অকুশলেহি কৰ্ম্মপথেহি সমস্বাগতাঃ সত্বা নরকে্যুপপদ্যন্তি ।” ( মহাবস্তু ) এই দশবিধ অকুশল কৰ্ম্মপথ ত্যাগ করিলে লোভ ( রাগ ), মোহ ও দ্বেষ, এই ত্ৰিবিধ অকুশলমূল * বিনাশ প্রাপ্ত হয় । ত্ৰিবিধ অকুশলমূল নিৰ্ম্মল হইলে, চতুধি ধৰ্ম্মপদ লাভ হইয়া থাকে । “চত্বারি ধৰ্ম্মপদানি । অনিত্যাঃ সৰ্ব্বসংস্কারাঃ । দুঃখাঃ সৰ্ব্বংস্কারাঃ । নিরাত্মনঃ সৰ্ব্বসংস্কারাঃ । শাস্তং নির্বাণং চেতি ।” ( ধৰ্ম্মসংগ্রহ ) সমস্ত পদার্থই অনিত্য, সকলই দুঃখবহুল, কাহারও স্বভাব বা অন্তনিরপেক্ষ-সত্তা নাই, শান্তিই নিৰ্ব্বাণ। এইরূপ চতুর্বিধ ভাবনাই ধৰ্ম্মের চারিট পদ । এই চতুবিধ ধৰ্ম্মপদের অনুশীলন করিলে, আর্য্যাষ্টমার্গে প্রবেশ লাভ হয় । সম্যক্‌-দৃষ্টি হইতে সম্যক্-সমাধিপর্যন্ত আটট আর্য্যমার্গের অনুসরণ দ্বারা অবিদ্যাদি নিরোধের দ্বার প্রাপ্ত হওয়া যায়। তদন স্তুর দানপারমিত, শালপরিমিত, ক্ষান্তিপরিমিত, বীর্যাপারমিতা, ধ্যানপারমিতা ও প্রজ্ঞাপারমিত৷

  • "ীণি অকুশলমুলানি। লোভোমোহো দেবশ্চেঠি ।" ( ধৰ্ম্মসংগ্রহ )