পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रै8० রবীন্দ্র-রচনাবলী চতুর্থ খালী শশাঙ্কলেখা যদিও বয়ঃক্রম হিসাবে গণ্যব্যক্তির মধ্যে নহে, বলিল, “ভাই, আমি একটা জপমালা তৈরি করিয়া দিব, সাহেবের নাম জপ করিবে।” তাহার বড়ো বোনরা তাহাকে শাসন করিয়া বলিল, “যাঃ, তোর আর জ্যাঠামি করিতে হইবে না।” নবেন্দুর মনে মনে রাগও হয়, লজ্জাও হয়, কিন্তু শুশলীদের ছাড়িতেও পারে না ; বিশেষত বড়োঙ্গালীটি বড়ো স্বন্দরী। তাহার মধুও যেমন কাটাও তেমনি , তাহার নেশা এবং তাহার জালা দুটোই মনের মধ্যে একেবারে লাগিয়া থাকে ! ক্ষতপক্ষ পতঙ্গ রাগিয়া ভো-ভো করিতে থাকে অথচ অন্ধ অবোধের মতে চারি দিকে ঘুরিয়া ঘুরিয়া মরে । অবশেষে শুশলীসংসর্গের প্রবল মোহে পড়িয়া সাহেবের সোহাগ-লালসা নবেন্দু সম্পূর্ণ অস্বীকার করিতে লাগিল। বড়োসাহেবকে যেদিন সেলাম নিবেদন করিতে যাইত শুালাদিগকে বলিত, “স্বরেন্দ্রবাড়য্যের বক্তৃতা শুনিতে যাইতেছি।” দাৰ্জিলিং হইতে প্রত্যাসল্প মেজোসাহেবকে শেয়ালদহ স্টেশনে সম্মান জ্ঞাপন করিতে যাইবার সময় শুশলীদিগকে বলিয়া যাইত, “মেজমামার সহিত দেখা করিতে চলিলাম।” সাহেব এবং শুালী, এই দুই নৌকায় পা দিয়া হতভাগা বিষম সংকটে পড়িল। শুশলীরা মনে মনে কহিল, ‘তোমার অন্ত নৌকাটাকে ফুটা না করিয়া ছাড়িব না।’ মহারানীর আগামী জন্মদিনে নবেন্দু খেতাব-স্বৰ্গলোকের প্রথম সোপানে রায়বাহাদুর পদবীতে পদার্পণ করিবেন এইরূপ গুজব শুনা গেল, কিন্তু সেই সম্ভাবিত সম্মানলাভের আনন্দ-উচ্ছসিত সংবাদ ভীরু বেচারা শুrলীদিগের নিকটে ব্যক্ত করিতে পারিল না ; কেবল একদিন শরৎশুক্লপক্ষের সায়াহ্নে সর্বনেশে চাদের আলোকে পরিপূর্ণচিত্তাবেগে স্ত্রীর কাছে প্রকাশ করিয়া ফেলিল। পরদিন দিবালোকে স্ত্রী পাৰি করিয়া তাহার বড়দিদির বাড়ি গিয়া অশ্রীগদগদ কণ্ঠে আক্ষেপ করিতে লাগিল। লাবণ্য কহিল, “তা বেশ তো, রায়বাহাদুর হইয়া তোর স্বামীর তো লেজ বাহির হইবে না, তোর এত লজ্জাট কিসের ‘’ অরুণলেখা বারম্বার বলিতে লাগিল, “লা দিদি, আর যা-ই হই, আমি রায়বাহাদুরনী হইতে পারিব না।” আসল কথা, অরুণের পরিচিত ভূতনাথবাবু রায়বাহাদুর ছিলেন, পদবীটার প্রতি আস্তরিক আপত্তির কারণ তাহাই ।