পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ९०¢ করিবে এই ভাবনায় মৃত্যুর পূর্বে তিনি সেই ঐশ্বৰ্ষ ভোগ করিতে একপ্রকার বিমুখ হইলেন। পূর্বেই বলিয়াছি, বর্তমানের অপেক্ষা, ভবিষ্যৎটাকেই তিনি সত্য বলিয়া জানিতেন । কিন্তু যুবতী বিনোদিনীর নিকট হঠাৎ এতটা প্রাজ্ঞতা প্রত্যাশা করা যায় না। সে বেচারার মূল্য বর্তমান তাহার নববিকশিত ধোঁবন বিনা প্রেমে বিফলে অতিবাহিত হইয়া যায়, এইটেই তাহার পক্ষে সবচেয়ে শোচনীয় ছিল । পারলৌকিক পিণ্ডের ক্ষুধাটা সে ইহলৌকিক চিত্তক্ষুধাদাহে একেবারেই ভুলিয়া বসিয়াছিল, মনুর পবিত্র বিধান এবং বৈদ্যনাথের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যায় তাহার বুভুক্ষিত হৃদয়ে তিলমাত্র তৃপ্তি হইল না। যে যাহাই বলুক, এই বয়সটাতে ভালোবাসা দেওয়া এবং ভালোবাসা পাওয়াই রমণীর সকল স্থখ এবং সকল কর্তব্যের চেয়ে স্বভাবতই বেশি মনে হয় । কিন্তু বিনোদার ভাগ্যে নবপ্রেমের বর্ষাবারিলিঞ্চনের বদলে স্বামীর, পিসশাশুড়ির এবং অন্যান্য গুরু ও গুরুতর লোকের সমুচ্চ আকাশ হইতে তর্জন-গর্জনের শিলাবৃষ্টি ব্যবস্থা হইল। সকলেই তাহাকে বন্ধ্যা বলিয়া অপরাধী করিত। একটা ফুলের চারণকে আলোক এবং বাতাস হইতে রুদ্ধঘরে রাখিলে তাহার যেরূপ অবস্থা হয়, বিনোদার বঞ্চিত যৌবনেরও সেইরূপ অবস্থা ঘটিয়াছিল। সদাসর্বদা এইসকল চাপাচুপি ও বকবিকির মধ্যে থাকিতে না পারিয়া যখন সে কুস্কমের বাড়ি তাল খেলিতে যাইত সেই সময়টা তাহার বড়ে ভালো লাগিত । সেখানে পুংনরকের ভীষণ ছায়া সর্বদা বর্তমান না থাকাতে হালি-ঠাট্টা-গল্পের কোনো বাধা ছিল না । কুসুম যেদিন তাল খেলিবার কাত না পাইত সেদিন তাহার তরুণ দেবর নগেন্দ্রকে ধরিয়া আনিত । নগেন্দ্র ও বিনোদার আপত্তি হাসিয়া উড়াইয়া দিত। এ সংসারে এক হইতে আর হয় এবং খেলা ক্রমে সংকটে পরিণত হইতে পারে, এ-সব গুরুতর কথা অল্পবয়সে হঠাৎ বিশ্বাস হয় না। o এ সম্বন্ধে নগেন্ত্রেরও আপত্তির দৃঢ়তা কিছুমাত্র দেখা গেল না, এখন আর সে তাস খেলিবার জন্ত অধিক পীড়াপীড়ির অপেক্ষা করিতে পারে না । এইরূপে বিনোদার সহিত নগেন্দ্রের প্রায়ই দেখাসাক্ষাৎ হইতে লাগিল । নগেন্দ্র যখন তাল খেলিতে বসিত তখন তাসের অপেক্ষ সজীবতর পদার্থের প্রতি তাহার নয়নমন পড়িয়া থাকাতে খেলায় প্রায়ই হারিতে লাগিল। পরাজয়ের প্রকৃত কারণ বুঝিতে কুহুম এবং বিনোদার কাহারে বাকি রহিল না। পূর্বেই বলিয়াছি, Հծիծt