পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার যে লাইনগুলি তুলিয়া দিয়াছেন তাহা আমাদের চলতি ভাষার হসন্ত স্বরের লাইন । 翻 আমার সকল কাটা ধন্ত করে ফুটবে গো ফুল ফুটুবে । আমার সকল ব্যথা রঙিন হয়ে গোলাপ্‌ হয়ে উঠবে। আপনি লক্ষ্য করিয়া দেখিবেন এই ছন্দের প্রত্যেক গাঠে গাঠে একটি করিয়া হসন্তের ভঙ্গি আছে । ধন্ত’ শব্দটার মধ্যেও একটা হসন্ত আছে । উহা “ধনন” এই বানানে লেখা যাইতে পারে। এইটে সাধু ভাষার ছন্দে লিখিলাম— যত কাটা মম সফল করিয়া ফুটিবে কুসুম ফুটিবে। সকল বেদন অরুণ বরনে গোলাপ হইয়া উঠিবে। অথবা যুক্তবর্ণকে যদি এক মাত্রা বলিয়া ধরা যায় তবে এমন হইতে পারে— সকল কণ্টক সার্থক করিয়া কুস্বমস্তবক ফুটিবে। বেদন যন্ত্রণ রক্তমূর্তি ধরি গোলাপ হইয়া উঠিবে। এমনি করিয়া সাধু ভাষার কাব্যসভায় যুক্তবর্ণের মৃদঙ্গটা আমরা ফুটা করিয়া দিয়াছি এবং হসস্তর বাশির ফাকগুলি সীসা দিয়া ভর্তি করিয়াছি । ভাষার নিজের অস্তরের স্বাভাবিক স্বরটাকে রুদ্ধ করিয়া দিয়া বাহির হইতে স্বর যোজনা করিতে হইয়াছে। সংস্কৃতভাষার জরি-জহরতের ঝালরওয়ালা দেড়-হাত দুই-হাত ঘোমটার আড়ালে আমাদের ভাষাবধুটির চোখের জল মুখের হালি সমস্ত ঢাকা পড়িয়া গেছে, তাহার কালো চোখের কটাক্ষে যে কত তীক্ষতা তাহা আমরা ভুলিয়া গেছি। আমি তাহার সেই সংস্কৃত ঘোমটা খুলিয়া দিবার কিছু সাধনা করিয়াছি তাহাতে সাধু লোকেরা ছি ছি করিয়াছে। সাধু লোকের জরির আঁচলাটা দেখিয়া তাহার দর যাচাই করুক ; আমার কাছে চোখের চাহনিটুকুর দর তাহার চেয়ে অনেক বেশি ; সে যে বিনামূল্যের ধন, সে ভট্টাচার্যপাড়ার হাটে বাজারে মেলে না । জ্যৈষ্ঠ ১৩২১ २ সম্মুখসমরে পড়ি বীরচূড়ামণি বীরবাহ— এই বাক্যটি আবৃত্তি করিবার সময়ে আমরা সম্মুখ’ শব্দটার উপরে ঝোক দিয়া সেই এক ঝোকে একেবারে বীরবাহ’ পর্যন্ত গড় গড় করিয়া চলিয়া যাইতে পারি। আমরা