পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

><br রবীন্দ্র-রচনাবলী সুমিত্রার প্রবেশ স্বমিত্রা। পদ্মের কুঁড়ি-হাতে একলা দাড়িয়ে কী ভাবছিল, বিপাশা ৷ বিপাশা। মনে-মনে ফুলের সঙ্গে করছি ঝগড়া। স্থমিত্রা । সংসারে তোর ঝগড়া আর কিছুতেই মিটতে চায় না। কিসের ঝগড়া । ফুলের সঙ্গে আবার ঝগড়া কিসের । বিপাশা। ওকে বলছি, তুমি কাশ্মীরের ফুল, এখানেও তোমার মুখ প্রসন্ন কেন। অপমান এত সহজেই ভুলেছ ? স্বমিত্রা। দেবতার ফুল মানুষের অপরাধ যদি মনে রাখত তা হলে মক্ক হত এই পৃথিবী। বিপাশা। তুমিই সেই দেবতার ফুল, মহারানী, কিন্তু কাটাও দেবতারই কৃষ্টি । সত্যি করে বলে, কাশ্মীরের পরে যে-অন্যায় হয়েছে সে কখনো তোমার মনে পড়ে না ? চুপ করে রইলে যে ? উত্তর দেবে না ? তোমার মাতৃভূমির দোহাই, এর একটা উত্তর দাও । স্থমিত্রা। সেই আমার মাতৃভূমিরই দোহাই, আমাকে কেবল এই একটিমাত্র কথাই মনে রাখতে দে যে, আমি জালন্ধরের রানী । বিপাশা। আর যা ভুলতে পার ভূলো, কখনো ভুলতে দেব না যে, তুমি কাশ্মীরের কঙ্কা । স্বমিত্রা । ভুলি নে । তাই কাশ্মীরের গৌরব রক্ষার জন্যেই কর্তব্যের গৌরব রাখতে হবে । নইলে এখানে কি দেহে মনে দাসীর কলঙ্ক মাখব। বিপাশা। সে-কথা প্রতিদিন বুঝতে পারছ, মহারানী । কাশ্মীরকে জয়ী করেছ এদের হৃদয়ে । আমি তো কেউ না, তবু তোমার মহিমার আলোতেই এরা আমাকে স্বদ্ধ যে চোখে দেখছে কাশ্মীরের কারো চোখে তো সে মোহ লাগে নি । স্বমিত্র। বিনয় করছিল বুঝি ? বিপাশা। বিনয় না মহারানী । আমি আপনাতে আপনি বিস্মিত । হেসো না তুমি, এরা আমাকে উদ্দেশ ক’রে যে-সব কথা আজকাল বলে থাকে কাশ্মীরের ভাষাতে সে-সব কথা আছে বলে অন্তত আমার জানা নেই । স্বমিত্রা । যে ভোরবেলায় এখানে চলে এলি তখনো তোর কানে কাশ্মীরের ভাষা সম্পূর্ণ জাগবার সময় হয় নি। তবু কাকলি একটু আধটু আরম্ভ হয়েছিল, সে কথা আজ বুঝি স্মরণ নেই ? যাই হোক এখনো যে উৎসবের সাজ করিল নি । বিপাশা ৷ সাজ শুরু করেছিলেম, এমন সময় কে একজন এলে বললে ওরা