পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ՀԳ> পিলিমা কছিলেন, "ওমা! এইমাত্র আলিয়াই অমনি যাই-যাই । আমন চঞ্চল মেয়েও তো দেখি নাই ।” হেমাঙ্গিনী কহিল, “কাকি, তোমার তো এখান হইতে শীঘ্র নড়িবার গতিক দেখি না। তা, তোমার এ হল আত্মীয়ঘর, তুমি যতদিন খুশি থাকে, আমি কিন্তু চলিয়া যাইব, তা তোমাকে বলিয়া রাখিতেছি।” এই বলিয়া আমার হাত ধরিয়া কহিল, "কী বলে ভাই, তোমরা তো আমার ঠিক আপন নও।” আমি তাহার এই সরল প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়া তাহাকে আমার বুকের কাছে টানিয়া লইলাম । দেখিলাম, পিলিমা যতই প্রবলা হউন এই কন্যাটিকে তাহার সামলাইবার সাধ্য নাই । পিলিমা প্রকাশ্বে রাগ না দেখাইয়া হেমাঙ্গিনীকে একটু আদর করিবার চেষ্টা করিলেন ; সে তাহা যেন গা হইতে ঝাড়িয়া ফেলিয়া দিল । পিলিমা সমস্ত ব্যাপারটাকে আছরে মেয়ের একটা পরিহাসের মতো উড়াইয়া দিয়া হাসিয়া চলিয়া যাইতে উদ্যত হইলেন। আবার কী ভাবিয়া ফিরিয়া আসিয়া হেমাঙ্গিনীকে কহিলেন, "হিমু, চল তোর স্নানের বেলা হইল।” সে আমার কাছে আসিয়া কহিল, “আমরা দুইজনে ঘাটে যাইব, কী বলো ভাই।” পিসিমা অনিচ্ছাসত্ত্বেও ক্ষাস্ত দিলেন ; তিনি জানিতেন, টানাটানি করিতে গেলে হেমাঙ্গিনীরই জয় হইবে এবং তাহদের মধ্যেকার বিরোধ অশোভনরূপে আমার সম্মুখে প্রকাশ হইবে। খিড়কির ঘাটে যাইতে যাইতে হেমাঙ্গিনী আমাকে জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার ছেলেপুলে নাই কেন।” আমি ঈষৎ হাসিয়া কহিলাম, "কেন তাহা কী করিয়া জানিব, ঈশ্বর দেন নাই।” হেমাঙ্গিনী কহিল, “অবশু, তোমার ভিতরে কিছু পাপ ছিল।” আমি কহিলাম, "তাহাও অন্তর্যামী জানেন।” বালিকা প্রমাণস্বরূপে কহিল, “দেখে-না, কাকির ভিতরে এত কুটিলতা যে উহার গর্ভে সস্তান জন্মিতে পায় না।” পাপপুণ্য স্বখদুঃখ দগুপুরস্কারের তত্ত্ব নিজেও বুঝি না, বালিকাকেও বুঝাইলাম না ; কেবল একটা নিশ্বাস ফেলিয়া মনে মনে তাহাকে কহিলাম, তুমিই জান ! হেমাঙ্গিনী তৎক্ষণাৎ আমাকে জড়াইয়া ধরিয়া হাসিয়া উঠিয়া কহিল, "ওমা, আমার কথা শুনিয়াও তোমার নিশ্বাস পড়ে! আমার কথা বুঝি কেহ গ্রাহ করে।” দেখিলাম, স্বামীর ডাক্তারি ব্যবসায়ে ব্যাঘাত হইতে লাগিল। দুরে ডাক পড়িলে তো বানই না, কাছে কোথাও গেলেও চটুপটু সারিয়া চলিয়া আসেন। পূর্বে যখন কর্মের অবসরে ঘরে থাকিতেন, মধ্যাহে আহার এবং নিদ্রার সময়ে কেবল বাড়ির ভিতরে আসিতেন। এখন পিসিমাও যখন-তখন ডাকিয়া পাঠান, তিনিও অনাবশুক পিলিমার খবর লইতে আসেন। পিসিম যখন ডাক ছাড়িয়া বলেন