পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

यांज़ैौ 8)3 এতবড়ো একটা চলতি ব্যবহারের কথা হারালো কোন ভাগ্যদোষে বলতে পারি নে। এমন দিন ছিল যখন লাজবালা ভয়বাসা বলতে বোঝাত লজ্জা অনুভব করা, ভয় অনুভব করা। এখন বলি, লজ্জা পাওয়া, ভয় পাওয়া । কিল খাওয়া, গাল খাওয়া, যেমন ভাষার বিকার— লজ্জা পাওয়া, ভয় পাওয়াও তেমনি । কারো পরে আমাদের অনুভব যখন সম্পূর্ণ ভালো হয়ে ওঠে, ভালো-ভাবায় ভালোইচ্ছায় মন কানায় কানায় ভরতি হয় তখন তাকেই বলি ভালোবাসা। পূর্ণ উৎকর্ষের ভাবকেই বলা যায় ভালো। স্বাস্থ্য যেমন প্রাণের পূর্ণতা, সৌন্দর্য যেমন রূপের পূর্ণতা, সত্য যেমন জ্ঞানের পূর্ণতা, ভালোবাসা তেমনি অনুভূতির পূর্ণতা। ইংরেজিতে গুড, কীলিং বলে এ তা নয়, একে বলা যেতে পারে পারফেক্টু ফীলিং। শুভ-ইচ্ছার পূর্ণতা হচ্ছে নৈতিক, তার ক্রিয়া ব্যবহারের উপর ; ভালোবাসার পূর্ণতা আত্মিক, সে হচ্ছে মানুষের ব্যক্তিস্বরূপের ( personalityর ) পরম প্রকাশ ; শুভ-ইচ্ছা অন্ধকারে যষ্টি, প্রেম অন্ধকারে চাদ । মায়ের স্নেহ মায়ের শুভ-ইচ্ছা মাত্র নয়, তা তার পূর্ণতার ঐশ্বর্য । তা অল্পের মতো নয়, তা অমৃতের মতো। এই অনুভূতির পূর্ণতা একটি শক্তি। ভালোবাসার বিষয়ের মধ্যে অসীমকে বোধ করবার শক্তি ; ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে অপরিমেয়কে দেখতে পাওয়া এবং স্বীকার করাই অপরিমেয়কে সীমার মন্দিরে জাগিয়ে তোলবার শক্তি । নিজের অস্তিত্বের মূল্য ষে-মানুষ ছোটো করে দেখে আত্ম-অবিশ্বাসের অবসাদেই সে নিজের সম্পদ উদঘাটিত করতে ভরসা পায় না। বিশ্ব আপনার সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রত্যেক মানুষকে গ্রহণ ও ধারণ করে, মানুষের অস্তরে এই মস্ত সত্যটির অনুভব হচ্ছে প্রেম । ব্যক্তিবিশেষকে সে ডাক দিয়ে বলে, “তুমি কারোর চেয়ে কম নও, তোমার মধ্যে এমন মূল্য আছে যার জন্যে প্রাণ দেওয়া চলে।” মানুষ যেখানে আপন সীমা টেনে দিয়ে নিজেকে সাধারণের সামিল করে অলস হয়ে বসে থাকে প্রেম ব্যক্তিবিশেষের সেই সাধারণ সীমাকে মানে না, তাকে অৰ্ঘ্য দিয়ে বলে, “তোমার কপালে আমি তিলক দিয়েছি, তুমি অসাধারণ।” স্বর্যের আলো বৃষ্টির জল যেমন নিবিচারে সর্বত্রই মাটির জড়তা ও দৈন্ত অস্বীকার করে, মরুকে বারবার স্পর্শ করে, তাকে খামলতায় পুলকিত করে তোলে, যে-ভূমি রিক্ত তারও সফলতার জন্তে যেমন তাদের নিরস্তর প্রতীক্ষা, তার কাছেও যেমন পূর্ণতার দাবি, মাছুষের সমাজে প্রেম তেমনি সব জায়গাতেই অসীম প্রত্যাশা জাগিয়ে রাখে। ব্যক্তিকে সে যে মূল্য দেয় সে মূল্য মহিমার মূল্য। অন্তর্নিহিত এই মহিমার আশ্বাসে মানুষের স্বষ্টিশক্তি নানাদিকে পূর্ণ হয়ে ওঠে । তার কর্মের ক্লাস্তি দূর হয়ে যায়। এই ব্যক্তিগত প্রেমের বাহন নারী। ইতিহাসের অপ্রকাশিত লিখন যদি বের করা