পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অচলায়তন wmዓ¢ দাদাঠাকুর। ছোটো ছেলেকে পাকা বেল দিলে সে ভারি খুশি হয়ে মনে করে এটা খেলার গোলা । কেবল সেটাকে গড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় । ওরাও সেইরকম স্বাধীনতাকে বাইরে থেকে ভারি একটা মজার জিনিস বলে জানে— কিন্তু জানে না স্থির হয়ে বসে তার ভিতর থেকে সার পদার্থ টা বের করে নিতে হয়। কিছুদিনের জন্যে তোমার মহাপঞ্চকদাদার হাতে ওদের ভার দিলেই খানিকটা ঠাণ্ড হয়ে ওরা নিজের ভিতরের দিকটাতে পাক ধরাবার সময় পাবে। পঞ্চক। তা হলে আমার মহাপঞ্চকদাদাকে কি ঐখানেই— দাদাঠাকুর ই৷ ঐখানেই বৈকি। তার ওখানে অনেক কাজ। এতদিন দ্বর বন্ধ করে অন্ধকারে ও মনে করছিল চাকাটা খুব চলছে, কিন্তু চাকাটা কেবল এক জায়গায় দাড়িয়ে ঘুরছিল তা সে দেখতেও পায় নি। এখন আলোতে তার দৃষ্টি খুলে গেছে, সে, আর সে-মানুষ নেই। কী করে আপনাকে আপনি ছাড়িয়ে উঠতে হয় সেইটে শেখাবার ভার ওর উপর। ক্ষুধাতৃষ্ণা-লোভভয়-জীবনমৃত্যুর আবরণ বিদীর্ণ করে আপনাকে প্রকাশ করার রহস্ত ওর হাতে আছে । আচার্য। আর এই চির-অপরাধীর কী বিধান করলে প্ৰভু ? দাদাঠাকুর । তোমাকে আর কাজ করতে হবে না আচার্য। তুমি আমার সঙ্গে এসো । আচার্য। বাচালে প্রভু, আমাকে রক্ষা করলে। আমার সমস্ত চিত্ত শুকিয়ে পাথর হয়ে গেছে— আমাকে আমারই এই পাথরের বেড়া থেকে বের করে আনো। আমি কোনো সম্পদ চাই নে— আমাকে একটু রস দাও । দাদাঠাকুর। ভাবনা নেই আচার্য, ভাবনা নেই– আনন্দের বর্ষ নেমে এসেছে— তার ঝর ঝর শব্দে মন নৃত্য করছে আমার । বাইরে বেরিয়ে এলেই দেখতে পাবে , চারি দিক ভেসে যাচ্ছে। ঘরে বসে ভয়ে কঁপিছে কারা । এ ঘনঘোর বর্ষার কালো মেঘে আনন্দ, তীক্ষু বিদ্যুতে আনন্দ, বজের গর্জনে আনন্দ । আজ মাথার উষ্ণীষ যদি উড়ে যায় তো উড়ে যাক, গায়ের উত্তরীয় যদি ভিজে যায় তো ভিজে যাক— আজ দুর্যোগ একে বলে কে । আজ ঘরের ভিত যদি ভেঙে গিয়ে থাকে যাক না— আজ একেবারে বড়ো রাস্তার মাঝখানে হবে মিলন । সুভদ্রের প্রবেশ স্বভত্র । গুরু ! দাদাঠাকুর। কী বাবা ? স্বভত্র। আমি যে-পাপ করেছি তার তো প্রায়শ্চিত্ত শেষ হল না!