পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী বিপাশা। করেন নি। আমাদের যুবরাজ ছিলেন অনুপস্থিত। মানস-সরোবর থেকে অভিষেকের জল আনতে গিয়েছিলেন। তাই যুদ্ধ হয় নি, দস্থ্যবৃত্তি হয়েছিল। নরেশ । তার পিতৃব্য চন্দ্রলেন ছিলেন প্রতিনিধি। যুদ্ধ করেছিলেন । বিপাশা। যুদ্ধের ভান করেছিলেন। লুঠ-করা সিংহাসন হায়-মানার ছদ্মমূল্যে নিজে কিনে নেবার জন্তে । তোমাদের সভাকবি এই নিয়ে সাত সর্গ কবিতা লিখেছেন । তোমাদের যুদ্ধ ফাকি, তোমাদের ইতিহাস ফাকি । চুপ করে হালছ যে ! লজ্জা নেই! নরেশ । মহারানী সুমিত্রা তো ফাকি নন। তিনি তো পর্বত থেকে নেমে এসেছেন আমাদের জয়লক্ষ্মীর অঙ্কুবর্তিনী হয়ে । বিপাশা। চুপ করে, চুপ করো। দুঃখের কথা মনে করিয়ে দিয়ে না। রাজকন্ত। তখন বালিকা, বয়েস ষোলো। খুড়োমহারাজ এসে বললেন, বিজয়ীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে, নইলে সন্ধি অসম্ভব । রাজকুমারী আগুন জালিয়ে বাপ দিয়ে মরতে গিয়েছিলেন । পুর্বৃদ্ধর এসে বললে, মা, রক্ষণ করে, যে পাণি মৃত্যুবর্ষণ করছে তোমার পাণি দিয়ে তাকে অধিকার করে— শাস্তি হোক । নরেশ । কিন্তু সেদিনকার কোনো গ্লানি তো মহারানীর মনে নেই । প্রসন্ন মহিমায় সিংহাসনে তার আপন স্থান নিয়েছেন । বিপাশা। মহাদুঃখ ভোলবার মতোই মহাশক্তি র্তার, তিনি যে সতীলক্ষ্মী । মৃত্যুর জন্তে যে আগুন জলেছিল তাকে সাক্ষী করে তার বিবাহ। তিনদিন কৈলাসনাথের মন্দিরে ধ্যানে বলে উপবাস করে নিজেকে শুদ্ধ করে নিয়েছেন । অসহ অপমানকে নিঃশেষে নিজের মধ্যে দগ্ধ করে নিয়ে তবে এলেন তোমাদের ঘরে । বীরাঙ্গনার ক্ষমা যদি না থাকত তবে আগুন ধরত তোমাদের সিংহাসনে । নরেশ । জান বিপাশা, ওই বীরাঙ্গনা আপন মহিমাচ্ছটায় কাশ্মীরের দিকে আমাদের হৃদয়ের একটি দীপ্যমান ছায়াপথ একে দিয়েছেন । জালদ্বরের যুবকদের মন তিনি উদাস করেছেন ওই কাশ্মীরের মুখে । তিনি তাদের ধ্যানের মধ্যে জাগিয়ে তুলেছেন একটি অপরূপ জ্যোতিমূর্তি। তুমি জান না, জালন্ধর থেকে কত পাগল গেছে ওই কাশ্মীরে, খুঁজতে তাদের সাধনার ধনকে। বিপাশা । হায় রে, এ তো যুদ্ধ করা নয় । ওখানে তোমাদের অন্ত্র চলবার রাস্তা থাকতেও পারে কিন্তু হৃদয়জয়ের পথ ও দিকে বন্ধ করে দিয়েছ তোমাদের বর্বরতা त्रेिट्च । নরেশ । সাধনা করতে হবে— তাতেও তো আনন্দ আছে। ৰিপাশ । তা করে, কিন্তু সিদ্ধির আশা ছেড়ে দাও ।