পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&to রবীন্দ্র-রচনাবলী এইরূপ অত্যন্ত স্বল্প স্বল্প তর্কস্বত্র কাটিবার জন্যই কি বিধাতা পুরুষমানুষকে এরূপ উদার, এরূপ প্রবল, এরূপ বৃহদাকার করিয়া নির্মাণ করিয়াছিলেন। তাহার কি বলিয়া বসিয়া অত্যন্ত স্বকুমার চিত্তবৃত্তিকে নিরতিশয় তনিমার সহিত অনুভব করিবার অবকাশ আছে, না ইহা তাহাকে শোভা পায় । যাহা হউক, আপন উন্নত হৃদয়বৃত্তির গর্বে স্ত্রীর গহনা স্পর্শ না করিয়া ফণিভূষণ অন্ত উপায়ে আর্থ-সংগ্রহের জন্ত কলিকাতায় চলিয়া গেল । সংসারে সাধারণত স্ত্রীকে স্বামী যতটা চেনে স্বামীকে স্ত্রী তাহার চেয়ে অনেক বেশি চেনে ; কিন্তু স্বামীর প্রকৃতি যদি অত্যন্ত সূক্ষ্ম হয় তবে স্ত্রীর অণুবীক্ষণে তাহার সমস্তটা ধরা পড়ে না। আমাদের ফণিভূষণকে ফণিভূষণের স্ত্রী ঠিক বুঝিত না। স্ত্রীলোকের অশিক্ষিতপটুত্ৰ যে-সকল বহুকালীগত প্রাচীন সংস্কারের দ্বারা গঠিত, অত্যস্ত নব্য পুরুষেরা তাহার বাহিরে গিয়া পড়ে । ইহার এক রকমের ! ইহারা মেয়েমানুষের মতোই রহস্যময় হইয়া উঠিতেছে। সাধারণ পুরুষমানুষের যে-কটা বড়ো বড়ো কোটা আছে, অর্থাৎ কেহ-ব বর্বর, কেহ-বা নির্বোধ, কেহ-বা অন্ধ, তাহার মধ্যে কোনোটাতেই ইহাদিগকে ঠিকমত স্থাপন করা যায় না । সুতরাং মণিমালিকা পরামর্শের জন্য তাহার মন্ত্রীকে ডাকিল। গ্রামসম্পর্কে অথবা দূরসম্পর্কে মণিমালিকার এক ভাই ফণিভূষণের কুঠিতে গোমস্তার অধীনে কাজ করিত। তাহার এমন স্বভাব ছিল না যে কাজের দ্বারা উন্নতি লাভ করে, কোনো-একটা উপলক্ষ্য করিয়া আত্মীয়তার জোরে বেতন এবং বেতনেরও বেশি কিছু কিছু সংগ্ৰহ করিত। து: মণিমালিকণ তাহাকে ডাকিয়া সকল কথা বলিল ; জিজ্ঞাসা করিল, “এখন পরামর্শ কী ” সে অত্যন্ত বুদ্ধিমানের মতো মাথা নাড়িল ; অর্থাৎ গতিক ভালো নহে। বুদ্ধিমানেরা কখনোই গতিক ভালো দেখে না। সে কহিল, ‘বাৰু কখনোই টাকা সংগ্ৰহ করিতে পারিবেন না, শেষকালে তোমার এ গহনাতে টান পড়িবেই।’ মণিমালিকা মানুষকে যেরূপ জানিত তাহাতে বুঝিল, এইরূপ হওয়াই সম্ভব এবং ইহাই সংগত । তাহার দুশ্চিন্তা স্বতীব্র হইয়া উঠিল । সংসারে তাহার সস্তান নাই , স্বামী আছে বটে কিন্তু স্বামীর অস্তিত্ব সে অস্তরের মধ্যে অনুভব করে না, অতএব যাহা তাহার একমাত্র যত্বের ধন, যাহা তাহার ছেলের মতো ক্রমে ক্রমে বৎসরে বৎসরে বাড়িয়া উঠিতেছে, যাহা রূপকমাত্র নহে, ৰাহা প্রকৃতই লোনা, বাহা