পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లనe রবীন্দ্র-রচনাবলী আমি এই কথাটি বোঝাতে চেষ্টা করছি যে, আক্ষরিক ছন্দ বলে কোনো অদ্ভূত পদার্থ বাংলায় কিম্বা অন্ত কোনো ভাষাতেই নেই। অক্ষর ধ্বনির চিহ্নমাত্র । যেমন ‘জল’ শব্দটাকে দিয়ে জিল’ পদার্থটার প্রতিবাদ চলে না, অক্ষরকে ধ্বনির প্রতিপক্ষ দাড় করানো তেমনি বিড়ম্বনা ৷ প্রশ্ন উঠবে, তাই যদি হয়, তা হলে খোড়া হসন্তবর্ণকে কখনো আধ মাত্রা কখনো পুরোমাত্রার পদবিতে বসানো হয় কেন। উত্তরে আমার বক্তব্য এই যে, স্বয়ং ভাষা যদি নিজেই আসন পেতে দেয় তবে তার উপরে অন্য কোনো আইন চলে না। ভাষাও বর্ণভেদে পঙক্তির ব্যবস্থা নিজের ধ্বনির নিয়ম বাচিয়ে তবে করতে পারে। বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণের ধ্বনিমাত্রা বিকল্পে দীর্ঘ ও হ্রস্ব হয়ে থাকে, ধন্থকের ছিলের মতো, টানলে বাড়ে, টান ছেড়ে দিলে কমে । সেটাকে গুণ বলেই গণ্য করি । তাতে ধ্বনিরসের বৈচিত্র্য হয়। আমরা দ্রুত লয়ে বলতে পারি ‘এইরে', আবার তাকে টানলে ডবল করে বলতে পারি ‘এ-ইরে’। তার কারণ আমাদের স্বরবর্ণগুলো জীবধর্মী, ব্যবহারের প্রয়োজনে একটা সীমার মধ্যে তাদের সংকোচন-প্রসারণ চলে। চারটে পাথরের মূর্তি ধরাবার মতো জায়গায় পাচটা ধরাতে গেলে মুশকিল বাধে ; কিন্তু চারজন প্যাসেঞ্জার বসবার বেঞ্চিতে পাচজন মানুষ বসালে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই, যদি তারা পরস্পর রাজি থাকে। বাংলা ভাষার স্বরবর্ণগুলিও পাথুরে নয়, নিজের স্থিতিস্থাপকতার গুণে তার প্রতিবেশীর জন্যে একটু-আধটু জায়গার ব্যবস্থা করতে সহজেই রাজি থাকে। এইজন্তেই অক্ষরের সংখ্যা গণনা করে ছন্দের ধ্বনিমাত্রা গণনা বাংলায় চলে না। এটা বাঙালির আত্মীয়সভার মতন । সেখানে যতগুলো চৌকি তার চেয়ে মাস্থ্য বেশি থাকা কিছুই অসম্ভব নয়, অথবা পাশে ফাক পেলে দুইজনের জায়গা একজনে হাত পা মেলে আরামে দখল করাও এই জনতার অভ্যস্ত। বাংলার প্রাকৃতছন্দ ধরে তার প্রমাণ দেওয়া যাক । বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদের এল বান। শিবঠাকুরের বিয়ে হবে, তিন কন্তে দান। এটা তিন মাত্রার ছন্দ । অর্থাৎ চার পোয়ায় সেরওয়ালা এর ওজন নয়, তিন পোয়ায় এর সের। এর প্রত্যেক পা ফেলার লয় হচ্ছে তিনের । বৃষটি। পড়ে- ! টাপুর । টুপুর | নদেয়। এল। বা-ন । শিবঠা । কুরের l বিয়ে- ] হবে- । তিনক ননে- ৷ দা-ন | দেখা যাচ্ছে, তিন গণনায় যেখানে যেখানে ফাক, পার্শ্ববর্তী স্বরবর্ণগুলি সহজেই ধ্বনি প্রসারিত করে সেই পোড়ো জায়গা দখল করে নিয়েছে। এত সহজে যে, হাজার