পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8૨8 রবীন্দ্র-রচনাবলী এ রস শালপাতায় তৈরি গদ্যের পেয়ালাতেই মানায়, ওটাকে তো ত্যাগ করা চলবে না। প্রতিদিনের তুচ্ছতার মধ্যে একটি স্বচ্ছতা আছে, তার মধ্যে দিয়ে অতুচ্ছ পড়ে ধরা— গদ্যের আছে সেই সহজ স্বচ্ছতা । তাই বলে এ কথা মনে করা ভুল হবে যে, গদ্যকাব্য কেবলমাত্র সেই অকিঞ্চিৎকর কাব্যবস্তুর বাহন। বৃহতের ভার অনায়ালে বহল করবার শক্তি গদ্যছন্দের মধ্যে আছে। ও যেন বনস্পতির মতো, তার পরবপুঞ্জের ছন্দোবিন্যাস কাটছাট সাজানো নয়, অসম তার স্তবকগুলি, তাতেই তার গাম্ভীর্ঘ ও সৌন্দর্য । প্রশ্ন উঠবে, গদ্য তা হলে কাব্যের পর্যায়ে উঠবে কোন নিয়মে। এর উত্তর সহজ। গদ্যকে যদি ঘরের গৃহিণী বলে কল্পনা কর তা হলে জানবে, তিনি তর্ক করেন, ধোবার বাড়ির কাপড়ের হিসাব রাখেন, তার কাশি সর্দি জর প্রভৃতি হয়, "মাসিক বস্তুমতী’ পাঠ করে থাকেন— এ-সমস্তই প্রাত্যহিক হিসেব, সংবাদের কোঠার অন্তর্গত, এই ফাকে ফাকে মাধুরীর স্রোত উছলিয়ে ওঠে, পাথর ডিঙিয়ে ঝরনার মতো । সেট। সংবাদের বিষয় নয়, সে সংগীতের শ্রেণীয়। গদ্যকাব্যে তাকে বাছাই করে নেওয়া যায় অথবা সংবাদের সঙ্গে সংগীত মিশিয়ে দেওয়া চলে । সেই মিশ্রণের উদ্দেপ্ত সংগীতের রসকে পরুষের স্পশে ফেলান্ত্রিত উগ্রতা দেওয়া । শিশুদের সেটা পছন্দ না হতে পারে, কিন্তু দৃঢ়ম্বন্ত বয়স্কের রুচিতে এটা উপাদেয় । আমার শেষ বক্তব্য এই যে, এই জাতের কবিতায় গদ্যকে কাব্য হতে হবে । গদ্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কাব্য পর্যন্ত পৌছল না, এটা শোচনীয়। দেবসেনাপতি কীর্তিকেয় যদি কেবল স্বগীয় পালোয়ানের আদর্শ হতেন তা হলে শুম্ভনিশুম্ভের চেয়ে উপরে উঠতে পারতেন না । কিন্তু, তার পৌরুষ যখন কমনীয়তার সঙ্গে মিশ্রিত হয় তখনই তিনি দেবসাহিত্যে গদ্যকাব্যের সিংহাসনের উপযুক্ত হন । ( দোহাই তোমার, বাংলাদেশের ময়ূরে-চড়া কীর্তিকটিকে সম্পূর্ণ ভোলবার চেষ্টা কোরে । ) ১৭ মে ১৯৩৫ वैश्रवणझनiथ् cवtश्वःङ् लिश्ठि গদ্যের চালটা পথে চলার চাল, পদ্যের চাল নাচের। এই নাচের গতির প্রত্যেক অংশের মধ্যে স্বসংগতি থাকা চাই । যদি কোনো গতির মধ্যে নাচের ধরনটা থাকে অথচ স্বসংগতি না থাকে তবে সেটা চলাও হৰে না, নাচও হবে না, হবে খোড়ার