পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছন্দ 制 \రీస్రి করে সেইখানেই তার দাড়াবার জায়গা। পদ্যছন্দ যেখানে আপন ধ্বনিসংগতিকে অপেক্ষাকৃত বড়ো রকমের সমাপ্তি দেয়, অৰ্থনির্বিচারে সেইখানে পঙক্তি শেষ করে। পদ্য সব-প্রথমে এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে অমিত্রাক্ষর ছন্দে, পঙক্তির বাইরে পদচারণা শুরু করলে। আধুনিক পদ্যে এই স্বৈরাচার দেখা দিল পয়ারকে আশ্রয় করে। বলা বাহুল্য, এক মাত্রা চলে না। বৃক্ষ ইব স্তন্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেক । যেই দুইয়ের সমাগম অমনি হল চলা শুরু । থাম আছে এক পারে দাড়িয়ে থেমে । জন্তুর পা, পাখির পাখা, মাছের পাখনা দুই সংখ্যার যোগে চলে । সেই নিয়মিত গতির উপরে যদি আর-একটা একের অতিরিক্ত ভার চাপানো যায় তবে সেই গতিতে ভারসাম্যের অপ্রতিষ্ঠতা প্রকাশ পায়। এই অনিয়মের ঠেলায় নিয়মিত গতির বেগ বিচিত্র হয়ে ওঠে। মানুষের দেহটা তার দৃষ্টান্ত । আদিমকালের চারপেয়ে মানুষ আধুনিক কালে দুই পায়ে সোজা হয়ে দাড়াল। তার কোমর থেকে পদতল পর্যন্ত দুই পায়ের সাহায্যে মজবুত, কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত টলমলে । এই দুই ভাগের অসামঞ্জস্তকে সামলাবার জন্তে মানুষের গতিতে মাথা হাত কোমর পা বিচিত্র হিল্লোলে হিল্লোলিত । পাখিও দুই পায়ে চলে, কিন্তু তার দেহ স্বভাবতই দুই পায়ের ছন্দে নিয়মিত । টলবার ভয় নেই তার। দুই মাত্রায় অর্থাৎ জোড় মাত্রায় যে পদ বাধা হয় তার মধ্যে দাড়ানোও আছে, চলাও আছে ; বেজোড় মাত্রায় চলার বোকটাই প্রধান । এইজন্তে অমিত্রাক্ষরে যেখানে-সেখানে থেমে যাবার ষে নিয়ম আছে সেটা পালন করা বিষম মাত্রার ছন্দের পক্ষে দুঃসাধ্য । এইজন্তে বেজোড় মাত্রায় পদ্মধর্মই একান্ত প্রবল। চেষ্টা করে দেখা যাক বেজোড় মাত্রার দরজাটা খুলে দিয়ে । প্রথম পরীক্ষণ হোক তিন মাত্রার মহলে । বিরহী গগন ধরণীর কাছে পাঠালো লিপিকা । দিকের প্রাস্তে নামে তাই মেঘ, বহিয়া সজল বেদনা ; বহিয়া তড়িৎ-চকিত ব্যাকুল আকৃতি। উংস্থক ধরা ধৈর্য হারায়, পারে না লুকাতে বুকের কাপন পল্লবদলে । বকুলকুঞ্জে রচে সে প্রাণের মুগ্ধ প্ৰলাপ, উল্লাল ভালে চামেলিগন্ধে পূর্বপবনে।