পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छ्ब्ग्रा 'రిప్ట్లు(t জাগিয়া ওঠে। বাংলাভাষায় শব্দের মধ্যে আওয়াজ মৃদ্ধ বলিয়া অনেক সময় আমাদের কবিদিগকে দায়ে পড়িয়া অপ্রচলিত সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করিতে হয়। এইজন্তই আমাদের যাত্রার ও পাচলির গানে ঘন ঘন অনুপ্রাস ব্যবহারের প্রথা আছে । সে অনুপ্রাস অনেক সময় অর্থহীন এবং ব্যাকরণবিরুদ্ধ ; কিন্তু সাধারণ শ্রোতাদের পক্ষে তাহার প্রয়োজন এত অধিক যে বাছ-বিচার করিবার সময় পাওয়া যায় না। নিরামিষ তরকারি রাধিতে হইলে ঝাল-মসলা বেশি করিয়া দিতে হয়, নহিলে স্বাদ পাওয়া যায় না। এই মসলা পুষ্টির জন্ত নহে ; ইহা কেবলমাত্র রসনাকে তাড়া দিয়া উত্তেজিত করিবার জন্ত। সেইজন্য দাশরথি রায়ের রামচন্দ্র যখন নিম্নলিখিত রীতিতে অনুপ্রাসচ্ছটা বিস্তার করিয়া বিলাপ করিতে থাকেন— অতি অগণ্য কাজে ছি ছি জঘন্ত সাজে ঘোর অরণ্যমাঝে কত কঁাদিলাম— তাহাতে শ্রোতার হৃদয় ক্ষুব্ধ হইয় উঠে। আমাদের বন্ধু দীনেশবাবু-কর্তৃক পরমপ্রশংসিত কৃষ্ণকমল গোস্বামী মহাশয়ের গানের মধ্যে নিম্নলিখিত প্রকারের আবর্জনা ঝুড়িকুড়ি চাপিয়া আছে । তাহাতে কাহাকেও বাধা দেয় না । 叠 পুনঃ যদি কোনক্ষণে দেখা দেয় কমলেক্ষণে যতনে করে রক্ষণে জানাবি তৎক্ষণে । এখানে কমলেক্ষণ এবং রক্ষণ শব্দটাতে এ-কার যোগ করা একেবারেই নিরর্থক ; কিন্তু অনুপ্রাসের বন্যার মুখে অমন কত এ-কার উ-কার স্থানে অস্থানে ভাসিয়া বেড়ায় তাহাতে কাহারো কিছু আসে যায় না। একটা কথা মনে রাখিতে হইবে, বাংলা রামায়ণ, মহাভারত, অন্নদামঙ্গল, কবিকঙ্কণচণ্ডী প্রভৃতি সমস্ত পুরাতন কাব্য গানের স্বরে কীর্তিত হইত। এইজন্ত শব্দের মধ্যে যাহা কিছু ক্ষীণতা ও ছন্দের মধ্যে যাহা কিছু ফাক ছিল সমস্তই গানের স্বরে ভরিয়া উঠিত , সঙ্গে সঙ্গে চামর দুলিত, করতাল চলিত এবং মৃদঙ্গ বাজিতে থাকিত। সেই সমস্ত বাদ দিয়া যখন আমাদের সাধুসাহিত্য-প্রচলিত ছন্দগুলি পড়িয়া দেখি, তখন দেখিতে পাই একে তো প্রত্যেক কথাটিতে স্বতন্ত্র ক্টোক নাই, তাহাতে প্রত্যেক অক্ষরটি একমাত্রা বলিয়া গণ্য হইয়াছে।. গানের পক্ষে ইহাই স্ববিধা । বাংলার সমতল ক্ষেত্রে নদীর ধারা যেমন স্বচ্ছন্দে চারি দিকে শাখায় প্রশাখায় প্রসারিত হইয়াছে, তেমনি সমমাত্রিক ছন্দে স্বর আপন প্রয়োজনষত যেমন-তেমন করিয়া চলিতে পারে। কথাগুলা মাথা ছেট করিয়া সম্পূর্ণ তাহার অন্থগত হইয়া থাকে।