পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তপতী ›ፃፃ শিখরিণীর প্রবেশ শিখরিণী | মা তপতী । স্থমিত্রা। কী শিখরিণী, তুমি যে এখানে ? শিখরিণী। অামার স্বামীকে ওরা মেরে ফেলেছে । স্থমিত্র। সে কী কথা । তিনি যে সাধুপুরুষ ছিলেন, তাকে মারলে কেন। শিখরিণী। যুবরাজ কোথায়, সেই সংবাদ তার কাছ থেকে ওরা বের করতে চেষ্টা করেছিল। দেশে সবাই তাকে সত্যবাদী বলে জানত বলেই তার এই বিপদ ঘটল। দেবি, আমি কিছুতেই সাজনা পাচ্ছি নে, আমাকে বুঝিয়ে বলো, সংসারে যারা ধর্মকে প্রাণপণে মানেন, ধর্ম কেন তাদেরই এত দুঃখ দিয়ে মারেন । স্বমিত্র । যারা মরতে পেরেছেন তারাই এ কথার তত্ত্ব জানেন। মৃত্যু দিয়ে র্যারা সত্যকে পান তাদের জন্ত শোক কোরো না । শিখরিণী । শোক করব না মা, তিনি আমার মৃত্যুর ভয় ঘুচিয়ে দিয়ে গেছেন, আমাকে এই তার শেষ দান । গ্রামের লোকেরা আমাকে বলেছে অভাগিনী ; কী বুঝবে তারা ! তিনি আমার স্বামী ছিলেন এই আমার পরম সৌভাগ্য । স্বমিত্রা। যারা তাকে মেরেছে, মৃত্যুর দ্বারা তাদের তিনি জয় করেছেন, সে কথা তারা কোনোদিন বুঝবে না এইটেই সকলের চেয়ে শোকের কথা। কিন্তু বংসে, তুমি এখানে এসেছ কেন । শিখরিণী। এখানে তোমার চরণতলে যদি আশ্রয় নিতে পারতুম তা হলে বেঁচে যেতুম। কিন্তু মা, সংসারের আলো নিবলে তবুও সংসার থাকে। আমার মেয়েটি আছে— অমন পিতার কোল হারিয়েছে, তার কল্যাণের জন্তেই সেই অন্ধকারায় আমাকে থাকতে হবে । তারই জন্তে তোমার কাছে এসেছি । সুমিত্রা । বলে, আমাকে কী করতে হবে। শিখরিণী। এই অলংকারগুলি এনেছি দেবমন্দিরে রক্ষণ করবার জন্তে। অামার মায়ের কাছ থেকে আমি পেয়েছি, আমার কস্তার জন্তে রাখব। যে পরিবারের ’পরে চন্দ্রসেনের বিদ্বেষ, জালন্ধরের সৈন্ত দিয়ে তাদের সর্বস্ব লুঠ করাচ্ছেন। এই লও মা, তোমার স্পর্শ লাভ করুক— আমার মেয়ের দেহ পবিত্র হবে । কুঞ্জলালের প্রবেশ কুঞ্জলাল । আজ বাহিরের কোথাও আমাদের দুঃখের পরিত্রাশ নেই দেবি, কিন্তু মনে হয় যেন অস্তরে অস্তরে তুমি সেই দুঃখকে নাশ করতে পার, তাই এসেছি।