পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S)obe রবীন্দ্র-রচনাবলী আছে । তার অবতারণাটি পরখ করে দেখা যাক। এর প্রত্যেক ভাগে কবি ইচ্ছামত ছোটো বড়ো নানা ওজনের নানা স্বর বাজিয়েছেন ; কোনো জায়গাতেই পয়ারকে তার প্রচলিত আডডায় এসে থামতে দেন নি। প্রথম আরম্ভেই বীরবাহুর বীরমর্যাদা স্বগভীর হয়ে বাজল— ‘সন্মুখসমরে পড়ি বীরচূড়ামণি বীরবাহু’। তার পরে তার অকালমৃত্যুর সংবাদটি যেন ভাঙা রণপতাকার মতো ভাঙা ছন্দে ভেঙে পড়ল— ‘চলি যবে গেলা যমপুরে অকালে । তার পরে ছন্দ নত হয়ে নমস্কার করলে— ‘কহ হে দেবি অমৃতভাষিণি । তার পরে আসল কথাটা, যেটা সবচেয়ে বড়ো কথা, সমস্ত কাব্যের ঘোর পরিণামের যেটা স্বচনা, সেটা যেন আসন্ন ঝটিকার সুদীর্ঘ মেঘগর্জনের মতো এক দিগন্ত থেকে আর-এক দিগন্তে উদ্বঘোষিত হল— ‘কোন বীরবরে বরি সেনাপতিপদে পাঠাইলা রণে পুনঃ রক্ষঃকুলনিধি রাঘবারি’ । বাংলা ভাষায় অধিকাংশ শব্দই দুই মাত্রার এবং তিন মাত্রার, এবং ত্রৈমাত্রিক শব্দের উপর বিভক্তিযোগে চার মাত্রার। পয়ারের পদবিভাগটি এমন যে, দুই, তিন এবং চার মাত্রার শব্দ তাতে সহজেই জায়গা পায় । চৈত্রের সেতারে বাজে বসন্তবাহার, বাতাসে বাতালে ওঠে তরঙ্গ তাহার। এ পয়ারে তিন অক্ষরের ভিড়। আবার— চকমকি-ঠোকাঠুকি-আগুনের প্রায় চোখোচোথি ঘটিতেই হাসি ঠিকরায় । এই পয়ারে চারের প্রাধান্ত । তারাগুলি সারারাতি কানে কানে কয়, সেই কথা ফুলে ফুলে ফুটে বনময়। এইখানে দুই মাত্রার আয়োজন । প্রেমের অমরাবতী প্রেয়সীর প্রাণে, কে সেথা দেবাধিপতি সে কথা কে জানে । এই পয়ারে এক থেকে পাচ পর্যন্ত সকল রকম মাত্রারই সমাবেশ। এর থেকে জানা ষায় পয়ারের আতিথেয়তা খুব বেশি, আর সেইজন্তেই বাংলা কাব্যসাহিত্যে প্রথম থেকেই পয়ারের এত অধিক চলন। পয়ারের চেয়ে লম্বা দৌড়ের সমমাত্রার ছন্দ আজকাল বাংলাকাব্যে চলছে। স্বপ্নপ্রাণে এর প্রথম প্রবর্তন দেখা গেছে। স্বপ্নপ্রাণ থেকেই তার নমুনা তুলে দেখাই।