পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ : ९br¢ সে আমার মাথার উপরেই পছুক, কিন্তু হৃদয়ের মধ্যে যেখানে আমার ধর্ম, আমার বিশ্বাস আছে, সেখানে পড়িতে দিব না । আমি যেমন ছিলাম তেমনি থাকিব । হেমাঙ্গিনী আমার পায়ের কাছে পড়িয়া আমার পায়ের খুলা লইল। আমি কহিলাম, “তুমি চিরসৌভাগ্যবতী, চিরস্থধিনী হও।” হেমাঙ্গিনী কহিল, "কেবল আশীর্বাদ নয়, তোমার সতীর হস্তে আমাকে এবং তোমার ভগ্নীপতিকে বরণ করিয়া লইতে হইবে। তুমি উাহাকে লজা করিলে চলিবে না। যদি অনুমতি কর তাহাকে অন্তঃপুরে লইয়া আসি।” আমি কছিলাম, “আনে।” কিছুক্ষণ পরে আমার ঘরে নূতন পদশৰ প্রবেশ করিল। সস্নেহ প্রশ্ন শুনিলাম, “ভালো আছিল, কুমু?” আমি ত্রস্ত বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া পায়ের কাছে প্রণাম করিয়া কহিলাম, "দাদা !” হেমাঙ্গিনী কহিল, "দাদা কিসের । কান মলিয়া দাও, ও তোমার ছোটো ভগ্নীপতি ।” * তখন সমস্ত বুঝিলাম। আমি জানিতাম, দাদার প্রতিজ্ঞ ছিল বিবাহ করিবেন না ; মা নাই, তাহাকে অকুনয় করিয়া বিবাহ করাইবার কেহ ছিল না । এবার আমিই তাহার বিবাহ দিলাম। দুই চক্ষু বাছিয়া হুহু করিয়া জল ঝরিয়া পড়িতে লাগিল, কিছুতেই থামাইতে পারি না। দাদা ধীরে ধীরে আমার চুলের মধ্যে হাত বুলাইয়া দিতে লাগিলেন ; হেমাঙ্গিনী আমাকে জড়াইয়া ধরিয়া কেবল হাসিতে লাগিল । রাত্রে ঘুম হইতেছিল না ; আমি উৎকণ্ঠিতচিত্তে স্বামীর প্রত্যাগমন প্রত্যাশা করিতেছিলাম । লজ্জা এবং নৈরাশু তিনি কিরূপভাবে সম্বরণ করিবেন, তাহা আমি স্থির করিতে পারিতেছিলাম না । অনেক রাত্রে অতি ধীরে দ্বার খুলিল। আমি চমকিয়া উঠিয়া বসিলাম। আমার স্বামীর পদশব্দ । বক্ষের মধ্যে হৃৎপিণ্ড আছাড় খাইতে লাগিল । তিনি বিছানার মধ্যে আসিয়া আমার হাত ধরিয়া কছিলেন, “তোমার দাদা আমাকে রক্ষা করিয়াছেন। আমি ক্ষণকালের মোহে পড়িয়া মরিতে যাইতেছিলাম । সে দিন আমি যখন নৌকায় উঠিয়াছিলাম, আমার বুকের মধ্যে যে কী পাখর চাপিয়াছিল তাহা অন্তৰ্বামী জানেন , যখন নদীর মধ্যে বড়ে পড়িম্বাছিলাম তখন প্রাণের ভয়ও হইতেছিল, সেই সঙ্গে ভাবিতেছিলাম, যদি ডুবিয়া যাই তাহা হইলেই আমার উদ্ধার হয়। মথুরগঞ্জে পৌঁছিয়া শুনিলাম, তাহার পূর্বদিনেই তোমার দাদার সঙ্গে হেমাদিনীর ՀՖկՀօ I