পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

● י וסמופ4 ক্ৰত, কিন্তু বলাইয়ের আগ্রহের সঙ্গে পায় দিতে পারে না। যখন হাত দুয়েক উচু হয়েছে তখন ওর পত্রসমৃদ্ধি দেখে ভাবলে এ একটা আশ্চর্য গাছ, শিশুর প্রথম বুদ্ধির আভাস দেখবা মাত্র মা যেমন মনে করে আশ্চর্য শিশু । বলাই ভাবলে, আমাকেও চমৎকৃত করে দেবে { আমি বললুম, “মালীকে বলতে হবে, এটা উপড়ে ফেলে দেবে।” বলাই চমকে উঠল। এ কী দারুশ কথা। বললে, “না, কাক, তোমাৰ দুটি পায়ে পড়ি, উপড়ে ফেলো না ।” f আমি বললুম, “কী যে বলিস তার ঠিক নেই। একেবারে রাঙ্কার মাঝখানে উঠেছে। বড়ো হলে চার দিকে তুলো ছড়িয়ে অস্থির করে দেবে।” আমার সঙ্গে যখন পারলে না, এই মাতৃহীন শিশুটি গেল তার কাকির কাছে। কোলে বসে তার গলা জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কঁাদতে বললে, “কাকি, তুমি কাকাকে বারণ করে দাও, গাছটা যেন না কাটেন।” উপায়টা ঠিক ঠাওরেছিল। ওর কাকি আমাকে ডেকে বললে, “ওগো, শুনছ । আহা, ওর গাছটা রেখে দাও।” রেখে দিলুম। গোড়ায় বলাই না যদি দেখাত তবে হয়তো ওটা আমার লক্ষ্যই হত না । কিন্তু, এখন রোজই চোখে পড়ে। বছরখানেকের মধ্যে গাছটা নির্লজের মতো মস্ত বেড়ে উঠল। বলাইয়ের এমন হল, এই গাছটার পরেই তার সব চেয়ে স্নেহ । গাছটাকে প্রতিদিনই দেখাচ্ছে নিতান্ত নির্বোধের মতো । একটা অজায়গায় এসে দাড়িয়ে কাউকে খাতির নেই, একেবারে খাড়া লম্বা হয়ে উঠছে। যে দেখে সেই ভাবে, এটা এখানে কী করতে। আরও দু-চারবার এর মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব করা গেল। বলাইকে লোভ দেখালুম, এর বদলে খুব ভালো কতকগুলো গোলাপের চারা আনিয়ে দেব । বললেম, “নিতান্তই শিমুলগাছই যদি তোমার পছন্দ, তবে জার-একটা চারা আনিয়ে বেড়ার ধারে পুতে দেব, সুন্দর দেখতে হবে।” কিন্তু কাটবার কথা বললেই বলাই আঁতকে ওঠে, আর ওর কাঙ্কি বলে, “আহা, এমনিই কী খারাপ দেখতে হয়েছে।” আমার বউদিদির মৃত্যু হয়েছে যখন এই ছেলেটি তার কোলে। বোধ করি সেই শোকে দাদার খেয়াল গেল, তিনি বিলেতে এঞ্জিনিয়ারিং শিখতে গেলেন। ছেলেটি আমার নিঃসস্তান ঘরে কাকির কোলেই মানুষ । বছর দশেক পরে দাদা