পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালাস্তর । Stre ভারতসাগরের তলায় তলায় ছোটো-ইংরেজের ‘মাইন’ সার বাধিয়া আছে । এটা অসম্ভব নয় যে তোমার ভাগ্যে জাহাজের যে ভাঙা কাঠ আছে সেটা স্বাধীনশাসনের অস্ত্যেষ্টিসৎকারের কাজে লাগিতে পারে। তার পরে লোনা জলে পেট ভরাইয়া ডাঙায় উঠতে পারিলেই আমাদের অদৃষ্টের কাছে কৃতজ্ঞ থাকিব। # দেখিতে পাই, বড়ো-ইংরেজের দাক্ষিণ্যকেই চরম সম্পদ গণ্য করিয়া আমাদের লোকে চড়া চড়া কথায় ছোটো-ইংরেজের মুখের উপর জবাব দিতে শুরু করিয়াছেন। ছোটো-ইংরেজের জোর যে কতটা খেয়াল করিতেছেন না । ভুলিয়াছেন, মাঝখানের পুরোহিতের মামুলি বরাদের পাওনা উপরের দেবতার বরকে বিকাইয়া দিতে পারে। এই মধ্যবর্তীর জোর কতটা এবং ইহাদের মেজাজটা কী ধরনের সে কি বারে বারে দেখি নাই । ছোটো-ইংরেজের জোর কত সেটা যে কেবল আমরা লর্ড রিপনের এবং কিছু পরিমাণে লর্ড হার্ডিঞ্জের আমলে দেখিলাম তাহা নহে, আর-একদিন লর্ড ক্যানিং এবং লর্ড বেটিঙ্কের আমলেও দেখা গেছে। তাই দেশের লোককে বার বার বলি, “কিসের জোরে স্পধ কর । গায়ের জোর ? তাহা তোমার নাই। কণ্ঠের জোর ? তোমার যেমনি অহংকার থাকৃ সেও তোমার নাই। মুরুব্বির জোর ? সেও তো দেখি না। যদি ধর্মের জোর থাকে তবে তারই প্রতি সম্পূর্ণ ভরসা রাখে। স্বেচ্ছাপূর্বক দুঃখ পাইবার মহৎ অধিকার হইতে কেহ তোমাকে বঞ্চিত করিতে পারিবে না। সত্যের জন্ত, ন্যায়ের জন্ত, লোকশ্রেয়ের জন্য আপনাকে উৎসর্গ করিবার গৌরব দুর্গম পথের প্রান্তে তোমার জন্ত অপেক্ষা করিতেছে । বর যদি পাই তবে অন্তর্ষামীর কাছ হইতে পাইব ।” দেখ নাই কি, বরদানের সংকল্প-ব্যাপারে ভারত-গবর্মেন্টের উচ্চতম বিভাগের যোগ আছে শুনিয়া এ-দেশী ইংরেজের সংবাদপত্র অট্টহাস্তে প্রশ্ন করিতেছে, “ভারতসচিবদের স্বায়ুবিকার ঘটিল নাকি । এমন কী উৎপাতের কারণ ঘটিয়াছে যে বজ্রপাতডিপার্টমেণ্ট হইতে হঠাৎ বৃষ্টিপাতের আয়োজন হইতেছে।” অথচ আমাদের ইস্কুলের কচি ছেলেগুলোকে পর্যস্ত ধরিয়া যখন দলে দলে আইনহীন রসাতলের নিরালোক ধামে পাঠানো হয় তখন ইহারাই বলেন, “উৎপাত এত গুরুতর যে, ইংরেজ-সাম্রাজ্যের আইন হার মানিল, মগের মুল্লুকের বেআইনের আমদানি করিতে হইল।” অর্থাৎ মারিবার বেলায় যে আতঙ্কটা সত্য, মলম দিবার বেলাতেই সেটা সত্য নয়। কেননা মারিতে খরচ নাই, মলম লাগাইতে খরচা আছে। কিন্তু তাও বলি, মারিবার খরচার বিল কালে মলমের খরচার চেয়ে বড়ো হইয়া উঠিতে পারে । তোমরা জোরের সঙ্গে ঠিক করিয়া আছ যে, ভারতের যে-ইতিহাস ভারতবাসীকে লইয়া, সেটা সামনের দিকে