পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

eలు ' ब्रदौटण-ब्रक्रमांदनौ अछे অন্তরকে বাইরের আক্রমণ থেকে বাচাও । দুইকে মিশিয়ে এক করে দেখো না । সমস্তটাকেই কেবলমাত্র সংসারের অন্তর্গত করে জেনো না। তা যদি কর তবে ংসার-সংকট থেকে উদ্ধার পাবার কোনো রাস্তা খুজে পাবে না। থেকে থেকে ঘোরতর কর্মসংঘাতের মাঝখানেই নিজের অন্তরকে নির্লিপ্ত বলে অনুভব করে। এই রকম ক্ষণে ক্ষণে বারংবার উপলব্ধি করতে হবে। খুব কোলাহলের ভিতরে থেকে একবার চকিতের মতো দেখে নিতে হবে, সেই অন্তরের মধ্যে কোনো কোলাহল পৌছোচ্ছে না। সেখানে শাস্ত স্তন্ধ নির্মল । না, কোনোমতেই সেখানে বাহিরের কোনো চাঞ্চল্যকে প্রবেশ করতে দেব না। এই যে আনাগোন, লোকলৌকিকতা, হাসি-খেলার মহা জনতা, এর মধ্যে বিদ্যুদ্বেগে একবার অন্তরের অস্তরে ঘুরে এস–দেখে এস সেখানে নিবাতনিষ্কম্প প্রদীপটি জলছে, অম্লত্তরঙ্গ সমূদ্র আপন অতলম্পর্শ গভীরতায় স্থির হয়ে রয়েছে, শোকের ক্ৰন্দন সেখানে পৌছোয় না, ক্রোধের গর্জন সেখানে শাস্ত । এই বিশ্বসংসারে এমন কিছু নেই, একটি কণাও নেই যার মধ্যে পরমাত্মা ওতপ্রোত হয়ে না রয়েছেন কিন্তু তবু তিনি ভ্রষ্টা—কিছুর দ্বারা তিনি অধিকৃত নন। এই জগৎ তারই বটে, তিনি এর সর্বত্রই আছেন বটে কিন্তু তবু তিনি এর অতীত হয়ে আছেন । আমাদের অন্তরাত্মাকেও সেই রকম করেই জানবে—সংসার তার, শরীর তার, বুদ্ধি তার, হৃদয় তার। এই সংসারে, শরীরে, বুদ্ধিতে, হৃদয়ে তিনি পরিব্যাপ্ত হয়েই আছেন কিন্তু তবু আমাদের অন্তরাত্মা এই সংসার, শরীর, বুদ্ধি ও হৃদয়ের অতীত । তিনি দ্রষ্ট । এই যে-আমি সংসারে জন্মলাভ করে বিশেষ নাম ধরে নানা মুখ দুঃখ ভোগ করছে এই তার বহিরংশকে তিনি সাক্ষীরূপেই দেখে যাচ্ছেন। আমরা যখন আত্মবিং হই, এই অন্তরাত্মাকে যখন সম্পূর্ণ উপলব্ধি করি, তখন আমরা নিজের নিত্য স্বরূপকে নিশ্চয় জেনে সমস্ত স্থখ-দুঃখের মধ্যে থেকেও স্থখ-দুঃখের অতীত হয়ে যাই, নিজের জীবনকে সংসারকে দ্রষ্টারূপে জানি । এমনি করে সমস্ত কর্ম থেকে, সংসার থেকে, সমস্ত ক্ষোভ থেকে বিবিক্ত করে আত্মাকে যখন বিশুদ্ধ স্বরূপে জানি তখন দেখতে পাই তা শূন্ত নয়, তখন নিজের অন্তরে সেই নির্মল নিস্তন্ধ পরম ব্যোমকে সেই চিদাকাশকে দেখি যেখানে—সত্যং জ্ঞানমনস্তং ব্রহ্ম নিহিতং গুহায়াং । নিজের মধ্যে সেই আশ্চর্য জ্যোতির্ময় পরম কোষকে জানতে পারি যেখানে সেই অতি শুভ্ৰ জ্যোতির জ্যোতি বিরাজমান।