পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাপানযাত্রী * లిపిd ওটা কিনা শূন্ত তাই ওকে আমরা বলি জড়ত, আলত— কিন্তু, সত্যকার সন্ন্যাসীর পক্ষে অবকাশে লজ্জা নেই, কেননা, তার অবকাশ পূর্ণতা, সেখানে উলঙ্গতা নেই। এ কেমনতরো ? যেমন প্রবন্ধ এবং গান। প্রবন্ধে কথা যেখানে থামে সেখানে কেবলমাত্র ফাকা । গানে কথা যেখানে থামে সেখানে স্বরে ভরাট। বৰ্ত্তত, স্বর যতই বৃহৎ হয়, ততই কথার অবকাশ বেশি থাকা চাই। গায়কের সার্থকতা কথার ফঁাকে, লেখকের সার্থকতা কথার বfাকে । আমরা লোকালয়ের মানুষ এই ষে জাহাজে করে চলছি, এইবার আমরা কিছুদিনের জন্ধে বিশ্বের দিকে মুখ ফেরাতে পেরেছি। স্বষ্টির যে পিঠে অনেকের ঠেলাঠেলি ভিড় সেদিক থেকে যে-পিঠে একের আসন সেদিকে এসেছি। দেখতে পাচ্ছি, এই যে নীল আকাশ এবং নীল সমুদ্রের বিপুল অবকাশ এ যেন অমৃতের পূর্ণ ঘট । অমৃত— সে যে শুভ্র আলোর মতো পরিপূর্ণ এক। শুভ্র আলোয় বহুবর্ণচ্ছটা একে মিলেছে, অমৃতরসের তেমনি বহুরস একে নিবিড় । জগতে এই এক আলো যেমন নানাবর্ণে বিচিত্র, সংসারে তেমনি এই এক রসই নানা রসে বিভক্ত। এইজন্যে, অনেককে সত্য করে জানতে হলে সেই এককে সঙ্গে সঙ্গে জানতে হয় । গাছ থেকে মে-ডাল কাটা হয়েছে সে-ডালের ভার মানুষকে বইতে হয় ; গাছে যে-ডাল আছে সে ডাল মানুষের ভার বইতে পারে। এক থেকে বিচ্ছিন্ন যে অনেক তারই ভার মানুষের পক্ষে বোঝা ; একের মধ্যে বিধৃত ষে অনেক সেই তো মানুষকে সম্পূর্ণ আশ্রয় দিতে পারে । 轟 সংসারে একদিকে আবশ্বকের ভিড়, অন্যদিকে অনাবশ্বকের। আবশ্বকের দায় আমাদের বহন করতেই হবে, তাতে আপত্তি করলে চলবে না। যেমন ঘরে থাকতে হলে দেয়াল না হলে চলে না, এও তেমনি । কিন্তু সবটাই তো দেয়াল নয়। অন্তত খানিকট করে জানলা থাকে, সেই ফাক দিয়ে আমরা আকাশের সঙ্গে আত্মীয়তা রক্ষা করি। কিন্তু, সংসারে দেখতে পাই, লোকে ওই জানলাটুকু সইতে পারে না। ওই ফাকটুকু ভরিয়ে দেবার জন্তে যতরকম সাংসারিক অনাবশ্বকের স্বষ্টি। ওই জানলাটার উপর বাজে কাজ, বাজে চিঠি, বাজে সভা, বাজে বক্তৃতা, বাজে হাসফাস মেরে দিয়ে দশে মিলে ওই ফাকটাকে একেবারে বুজিয়ে ফেলা হয়। নারকেলের ছিবড়ের মতো, এই অনাবশ্বকের পরিমাণটাই বেশি। ঘরে বাইরে, ধর্মে কর্মে, আমোদে আহলাদে, সকল বিষয়েই এরই অধিকার সব-চেয়ে বড়ে ; এর কাজই হচ্ছে ফাক বুজিয়ে বেড়ানো। কিন্তু, কথা ছিল ফাক বোজাব না, কেননা, ফাকের ভিতর দিয়ে ছাড়া পূর্ণকে পাওয়া যায় না। ফাকের ভিতর দিয়েই আলো আলে, হাওয়া আসে। কিন্তু, আলো হাওয়া