পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অচলায়তন ৩২৩ সাধনা যতই কঠিন হচ্ছিল উৎসাহ আরো বেড়ে উঠছিল । তার পরে সেই সাধনার চক্রে ঘুরতে ঘুরতে একেবারেই ভুলে বসেছিলুম ষে সিদ্ধি বলে কিছু-একটা আছে। অাজ গুরু আসবেন শুনে হঠাৎ মনটা থমকে দাড়াল— আজ নিজেকে জিজ্ঞাসা করলুম, ওরে পণ্ডিত, তোর সব শাস্ত্রই তো পড়া হল, সব ব্রতই তো পালন করলি, এখন বল মূৰ্খ, কী পেয়েছিস । কিছু না কিছু না, সুতসোম। আজ দেখছি— এই অতিদীর্ঘকালের সাধনা কেবল আপনাকেই আপনি প্রদক্ষিণ করেছে— কেবল প্রতিদিনের অন্তহীন পুনরাবৃত্তি রাশীকৃত হয়ে জমে উঠেছে। উপাচার্য। বোলো না, বোলো না, এমন কথা বোলো না। আচার্যদেব, আজ কেন হঠাৎ তোমার মন এত উদভ্ৰাস্ত হল ! আচার্য। স্থতসোম, তোমার মনে কি তুমি শাস্তি পেয়েছ ? উপাচার্য। আমার তো একমুহূর্তের জন্যে অশাস্তি নেই। আচার্য । অশান্তি নেই ? উপাচার্য। কিছুমাত্র না। আমার অহোরাত্র একেবারে নিয়মে বাধা । সে হাজার বছরের বাধন । ক্রমেই সে পাথরের মতো বজের মতো শক্ত হয়ে জমে গেছে। এক মুহূর্তের জন্তেও কিছু ভাবতে হয় না। এর চেয়ে আর শাস্তি কী হতে পারে ? আচার্য। না না, তবে আমি ভুল করছিলুম স্থতসোম, ভুল করছিলুম। যা আছে এই ঠিক, এইই ঠিক। যে করেই হোক এর মধ্যে শাস্তি পেতেই হবে। উপাচার্য। সেইজন্যেই তো অচলায়তন ছেড়ে আমাদের কোথাও বেরোনো নিষেধ । তাতে যে মনের বিক্ষেপ ঘটে— শাস্তি চলে যায় । আচার্য। ঠিক, ঠিক— ঠিক বলেছ স্থতসোম। অচেনার মধ্যে গিয়ে কোথায় তার অস্ত পাব ? এখানে সমস্তই জানা, সমস্তই অভ্যস্ত— এখানকার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এখানকারই সমস্ত শাস্ত্রের ভিতর থেকে পাওয়া যায়— তার জন্তে একটুও বাইরে যাবার দরকার হয় না। এই তো নিশ্চল শাস্তি। গুরু, তুমি যখন আসবে, কিছু সরিয়ো না কিছু আঘাত কোরো না— চারি দিকেই আমাদের শাস্তি, সেই বুঝে পা ফেলো। দয়া কোরো, দয়া কোরো অামাদের। আমাদের পা আড়ষ্ট হয়ে গেছে, আমাদের আর চলবার শক্তি নেই। অনেক বৎসর অনেক যুগ যে এমনি করেই কেটে গেল – প্রাচীন, প্রাচীন, সমস্ত প্রাচীন হয়ে গেছে— আজ হঠাৎ বোলো না ষে নূতনকে চাই— আমাদের আর সমর নেই। উপাচার্য । আচার্যদেব, তোমাকে এমন বিচলিত হতে কখনো দেখি নি । আচার্য। কী জানি, আমার কেমন মনে হচ্ছে কেবল একলা আমিই না,